তিস্তা রেল সেতু রংপুর জেলার একটি পুরাতন রেলসেতু। তিস্তা রেল সেতুর উত্তর অংশ লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও দক্ষিণ অংশ রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। রেলসেতু হিসেবে তৈরি করা হলেও ১৯৭৮ সালের ৪ মার্চ থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে এই সেতুর পাশে তিস্তা সড়ক সেতু তৈরি করা হলে। তিস্তা রেল সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু রেল চলাচলের জন্য বর্তমানে সেতুটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কোম্পানি ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতে প্রথম রেলওয়ে সার্ভিস চালু করে। এর পর ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার এবং সে সময়ে দুর্ভিক্ষকালীন সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের জন্য তৎকালীন নদীয়া জেলার পোড়াদহ হতে পাবর্তীপুর হয়ে উত্তরে সদ্য রংপুর থেকে পৃথক হওয়া জলপাইগুড়ি জেলা এবং পার্বতীপুর থেকে রংপুর শহর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়। ১৮৭৯ কাউনিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। পরে তা লালমনিরহাট হয়ে রংপুরের সাথে আসামের সরাসরি রেলযোগ যুক্ত করা হয়। এ সময় তিস্তা নদীর উপর সেতু নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য বাষ্পীয় ইঞ্জিনযুক্ত ফেরীর ব্যবস্থা করা হয়।
অতঃপর ১৮৯৯- ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর জেলার মাহীগঞ্জ থানার অন্তর্গত তিস্তা নদীর উপর রেলওয়ে সেতুটি নির্মিত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য একটি সেতু থেকে স্প্যান, গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তা মেরামত করা হয়। অনেকদিন পর্যন্ত সেতুটি কেবলমাত্র রেল যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো। সড়ক যোগাযোগের জন্য বিকল্প একটি সেতু নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে বলে এর উপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালুর সম্ভাব্যতা ও উপযুক্ততা যাচাইয়ের পর ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতুটির উপর দিয়ে রেলওয়ের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু হয় । তখন থেকে তিস্তা রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে রেল ও সড়ক উভয় যোগাযোগ-ই অব্যাহত রয়েছে। সেতুটি লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সাথে রংপুর সহ অন্যান্য জেলার সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে অদ্যাবধি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
তিস্তা রেল সেতুটির বয়স ১২৩ বছর পার হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র রেল সেতু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।