রংপুর-কড়িগ্রাম মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌস্তায় এ প্রাচীন মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। শিলালিপি অনুযায়ী মসজিদটি আরবি ৬৯ হিজরিতে (৬৮৮ খ্রি.) নির্মিত। স্থানীয়ভাবে এটি হারানো মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদের নতুনভাবে নির্মিত মসজিদ স্থানে বহুদিন ধরে একটি পতিত জঙ্গল ছিল। যার নাম ‘মজদের আড়া’। স্থানীয় ভাষায় ‘আড্ডা’ শব্দের অর্থ জঙ্গলময় স্থান। কেউ হিংস্র জীবজন্তু, সাপ-বিষ্ণু ইত্যাদির ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করত না। স্থানীয় লোকজন কর্তৃক ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে চাষাবাদের জন্য স্থানটিকে পরিষ্কার করে সমতল করার সময় মাটির নিচ থেকে প্রাচীন আমলের ইট বেরিয়ে আসে।
স্থানীয় লোকজন প্রাথমিকভাবে এটিকে কোনো পুরাতন জমিদার বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা মনে করেছিল। কিন্তু ইটের স্তূপ থেকে পৃথকভাবে ভিটকে পড়া ১৫ সেমি. x ১৫ সেমি. x ৫ সেমি (৬x৬’x ২”) পরিমাপের একটি শিলালিপি পাওয়া যায়- যার মধ্যে স্পষ্টাক্ষরে আরবিতে লিখা আছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯’। কলেমা খচিত শিলালিপিটি বর্তমানে রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ির জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। শিলালিপি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এটি প্রায় সাড়ে তেরোশ বছরের প্রাচীন একটি মসজিদ।
এরপর খননের দ্বারা মসজিদের একটি পূর্ণাঙ্গ ভিত উদঘাটিত হয়। প্রাচীন এই মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ৬.৪ মিটার (২২ ফুট) লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩ মিটার (১০ ফুট) প্রশস্ত। মসজিদের চারকোণে চারটি স্তম্ভ ছিল এবং এর ধ্বংসাবশেষ থেকে গম্বুজ ও মিনারের চূড়া পাওয়া যায়। তারপর স্থানীয়দের নিয়ে ‘হারানো মসজিদ কমিটি’ গঠিত হয় এবং ১৯৮৬ সাল থেকে এলাকাবাসী এখানে নামাজ পড়তে শুরু করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এই মসজিদ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর এক সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) এই মসজিদের নির্মাতা এবং তিনি সে সময় এ অঞ্চল দিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য চীন দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চীনের কোয়ান্টা শহরে তার মাজার ও মসজিদ রয়েছে। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা সৌখিন প্রত্নতত্ত্ববিদ সাউথ ওয়েলসের অধিবাসী টিম স্টিল আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজিস্ট- সহায়তা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এমনটি হলে বাংলায় মুসলমানদের আগমনের ইতিহাস পাল্টে যাবে।
কেননা প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা বিজয়ের দ্বারা এ ভূখণ্ডে ইসলামের সূচনা হয়। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বখতিয়ার খলজীর আগমনের পাঁচ শতাধিক বছর পূর্বেই আরবি প্রথম শতাব্দীতে এখানে ইসলামের শান্তির বার্তা নিয়ে মুসলমানদের আগমন ঘটে। বর্তমানে সেখানে নতুনভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।