পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বিভিন্ন সময়ে দ্রাবিড়, তুর্কি, পারসীয়, আফগান, পর্তুগিজ এবং ইংরেজ জাতি আগমণের মাধ্যমে এই উপমহাদেশের খাবারের সাথে যুক্ত হয়েছে সেই সব দেশের রান্নার বিভিন্ন অনুষঙ্গ, বৈচিত্রতা, স্বাদ এবং বাহারি পদ।
প্রাক-মোগল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত সবসময় ঢাকার জনগণ সকাল, দুপুর ও রাতে- এই তিনবেলা খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত ছিল। প্রাচীনকালে ঢাকাবাসী তিনবেলাই ভাত খেত। সকালে ভাতের সাথে মাছ, মাংসের পাশাপাশি ঘি-চিনি, মালাই-চিনি, ডিম ভাজা, আম, কলা, দুধ, গুড় ইত্যাদি খাওয়া হতো। এছাড়া চিড়া-কলা, চিড়া-গুড়, মালাই-মুড়ি দিয়েও নাশতা করত অনেকে।
কেউ কেউ আবার চা, পুরি, বাকরখানি দিয়ে নাশতা সেরে নিতেন। ভোর থেকে বিক্রি হতো এক ধরনের ঘোল, যাকে স্থানীয়রা মাঠা বলতেন। এটি খুবই জনপ্রিয় ছিল ঢাকাবাসীর কাছে। অনেকে মনে করত মাঠা খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। উচ্চবিত্তরা সকালের নাশতায় রুটি ও পরোটা খেতেন।
উনিশ শতকে চা বিস্কুট খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। ঢাকায় তৈরি বিস্কুটের মধ্যে অন্যতম ছিল লাঠি, কুলিচা, নানখাতাই, টোস্ট। ধীরে ধীরে বিস্কুটের পাশাপাশি মুড়ি, রুটি, পাউরুটি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। সকালে অনেকে চায়ের সঙ্গে নারিকেল দিয়ে তৈরি গোলগোলা খেতেন।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে চকবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় প্রচুর খাবারের দোকান গড়ে ওঠে। সে সময় বেশকিছু পরিবারে সকালের নাশতা কিনে খাওয়ার রীতি দেখা যায়। এসব খাবারের মধ্যে ভাজি-পুরি, লুচি, মোহনভোগ, তন্দুর রুটি- নেহারি, পরোটা-বুন্দিয়া, হালুয়া, বাকরখানি, তেহারি, বিরিয়ানি অন্যতম।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিকদের সহজে খাবার সরবরাহ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও রুটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে ব্যাপকভাবে। আগে তিনবেলা ভাত খেতে পছন্দ করলেও এরপর থেকে মানুষ সকালে রুটি খাওয়া শুরু করে।
ঢাকাবাসীর কাছে চিনি পরোটা, আলু পরোটা, ডাল পরোটা, ঘি পরোটার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। আদিকালে ঢাকাবাসীর রাতের খাবারে আমিষের আধিক্য লক্ষ করা যেতো। ধারণা করা হয়, রাতে গৃহকর্তাসহ পরিবারের সকল সদস্য একসাথে খাবার খেতো বলেই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। চকবাজারের লাবড়ি, পাতখিসসা ও মালাই ছিল খুবই জনপ্রিয়। প্রাচীন ঢাকাইয়ারা খাবারের পর একটুখানি ভাত রেখে সেটা মালাই দিয়ে মেখে খেতে পছন্দ করতেন।