পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ইউরোপ হলো সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা মহাদেশ। যেখানে ২০২৪ সালে ভ্রমণ করেছেন ৭ হাজার ৪৭০ লাখ (৭৪৭ মিলিয়ন) মানুষ।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলার পরেও ইউরোপে এত বিপুল পরিমাণ পর্যটকের ঘুরতে যাওয়া এই খাতের জন্য দারুণ খবর। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে গত বছর ফ্রান্সে গেছেন সবচেয়ে বেশি পর্যটক। দেশটির পর্যটন বোর্ড প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ১০ কোটি মানুষ ফ্রান্স ভ্রমণ করেছে। একই সময়ে স্পেনে ঘুরতে গিয়েছেন ৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষ।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল ট্যুরিজম মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৪ সাল ছিল ফরাসি পর্যটনের জন্য এক ব্যতিক্রমী বছর। যা দেশে ২০২৫ সালের জন্যও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
গত বছরের পর্যটন খাতে মজার বিষয় হলো, কেবল বড় বড় দেশগুলোই নয়, ছোট দেশগুলোও প্রচুর পর্যটককে আকৃষ্ট করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতারে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ১৩৭ শতাংশ। এর পেছনে দেশটির অবকাঠামো খাতের বিনিয়োগের অবদান রয়েছে। ২০২৪ সালের সেরা বিমান পরিষেবা সংস্থা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ, সেরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খেতাব গেছে দোহার আল হাম্মদ বিমানবন্দরের ঘরে। এগুলোও পর্যটন খাতের বিকাশে কাজে লেগেছে।
এছাড়া ফ্রান্স-স্পেন সীমান্তের ছোট্ট দেশ আন্দোরা, ডমিনিকান রিপাবলিক, কুয়েত, আলবেনিয়া এবং এল সালভাদোরের মতো দেশগুলোতেও বিপুল সংখ্যক পর্যটক ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।
২০২৪ সালের পর্যটন শিল্পে উল্লম্ফনের বিষয়ে ইউএন ট্যুরিজমের সেক্রেটারি জেনারেল জুরাব পলোলিকাশভিলি বলেন, বিশ্বের অনেক পর্যটনকেন্দ্রের আয়ই ২০১৯ সালকে ছাড়িয়ে গেছে। এই উল্লম্ফণ ২০২৫ সালেও বজায় থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। কারণ বিশ্বজুড়েই আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নয়ন শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ায় অনেক পর্যটনকেন্দ্রের ওপর বিরূপ প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। ঐতিহাসিক স্থান, জলবায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং প্রতিবেশের কথা মাথায় রেখে কোথাও কোথাও পর্যটকের সংখ্যা সীমিতও করে দেওয়া হচ্ছে।
যেমন ঐতিহাসিক ভেনিস নগরীকে রক্ষা করতে পর্যটক প্রবেশে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। মাউন্ট ফুজির প্রতিবেশ রক্ষায় সেখানে প্রতিদিন কতজন পর্যটক যেতে পারবেন তার সীমা ঠিক করে দিয়েছে জাপান। আমস্টারডামসহ অনেক বন্দর শহরই দিনে কতটি ক্রুজ শিপ নোঙর করতে পারবে তার সংখ্যা ঠিক করে দিয়েছে।
ইউএন ট্যুরিজমের বলছে, ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত যদি আর না বাড়ে তাহলে এশিয়ার দেশগুলোতে ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে পর্যটন তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়বে।
তবে চলতি বছর বিশ্বের পর্যটন খাতকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিবহণ ও আবাসন ব্যয়, অস্থির জ্বালানি তেলের বাজার এবং কর্মী সংকট।