পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
বিশাল আকৃতির ময়ূর, আর তার শরীর জুড়ে আছে রং-বেরঙের ফুল। একরাশ ফুলের সৌরভ নিয়ে ময়ূরটি তার সৌন্দর্যের সবটা জুড়ে দিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে। জীবন্ত কোনো ময়ূর নয়, তারপরও ময়ূরের আদলে নির্মিত এমন সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। কাছে গিয়ে কেউ কেউ নিজেকে ফ্রেমবন্দিও করে রাখছেন।
গত ৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই উৎসব শেষ হবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ডিসি পার্ক। শুধু ফুল নয়, মাসব্যাপী এই উৎসবে ফুল ছাড়া ও প্রতিদিন থাকছে নানা ব্যতিক্রমী অনুষঙ্গ।
এই ফুলের স্বর্গে যেতে প্রথমে যাবেন চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়ে। সেখান থেকে সীতাকুণ্ডগামী লোকাল বাস চেপে মাত্র ১০ টাকা ভাড়ায় বাংলাবাজার মুখে নামবেন। তারপর ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় রিকশাযোগে কিংবা ৫-১০ মিনিট হেঁটেই যাওয়া যায় ডিসি পার্কে। ৫০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে টিকেট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে এই পার্কে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ডিসি পার্ক এর ওয়েবসাইট থেকে টিকেট নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
আর সেখানে প্রবেশের পরই দেখতে পাবেন বাহারী রঙিন ফুল। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এই ব্যতিক্রমী উৎসব। দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির বাহারি সব ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। পার্কে ঢুকতেই হাতের বাম পাশে দেখা মিলবে নান্দনিক ওয়াকওয়ে, যার দু-পাশেই বাহারি রঙিন ফুল, আছে নার্সারিও।
পার্কের মধ্যেই আছে বিশাল কৃত্রিম দীঘি। দীঘির পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সাম্পান, প্যাডেলচালিত নৌকা। আছে কায়াকিং সুবিধাও। দীঘির একপাশে বসানো হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক বসার স্থান। আর এই পথেই সারি সারি খেজুর গাছ ও রস আহরণের দৃশ্য দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া পার্কের একপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। যেখানে প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাচ-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন যা আগত দর্শনার্থীদের আনন্দিত করছে।
পার্কের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে রয়েছে ফুড স্টল। এছাড়াও আছে শিশুদের বিনোদনের জন্য কিডস জোনের পাশাপাশি আছে গ্রামীণ মেলা। যার ১০-১২ টি স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক। এছাড়া দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ জোগাচ্ছে উত্তর পাশের ভাসমান ফুলের বাগান।
শুধু তাই নয়, এবারের ফুল উৎসবে নির্মাণ করা হয়েছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান কর্ণার। যেখানে শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ’সহ অন্যান্য শহীদদের ছবি স্থান পেয়েছে৷দিন ও রাতে দুই রকম সৌন্দর্য দেখা মিলছে এই উৎসবে। সন্ধ্যা নামলেই পুরো পার্কজুড়ে আলোকসজ্জায় মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
এবার তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে এই ফুল উৎসব। প্রাকৃতিক পরিবেশের ১৯৪ একর জায়গাজুড়ে এখন শুধুই ফুলের রাজত্ব। আর এই ডিসি পার্কের রং-বেরঙের ফুলের সাথে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত এখানে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থী।