নতুন বছরের শুরুতে মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সারি সারি চা বাগান, পাখির কলরবে মুখরিত হাকালুকি হাওর ও বাইক্কাবিল হাইল হাওর। সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ টিলা। চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার জেলা পর্যটকদের জন্য এখন আকর্ষণীয় স্থান।
জানা গেছে, আগামী ১০-১২ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা গবেষণার সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
হারমোনি ফেস্টিভালে শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা হবে। এ আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ৪৪টি স্টলের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য, খাবার, জীবনাচার, পোষাক ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রয় করতে পারবেন।
এছাড়াও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন নাচ, গান, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে তুলে ধরতে পারবেন। এ আয়োজন শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীদের জীবনধারা, সংস্কৃতি, উৎপাদিত পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে পর্যটনশিল্পের বিকাশ সাধন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেদ জানান, হারমোনি ফেস্টিভ্যালে খাসিয়া, গারো, মনিপুরি, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বাড়াইক, কন্দ, রাজবল্বব, ভূইয়া, সাঁওতাল, ওরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, ভূমিজ, বুনারাজি, লোহার, গঞ্জ, কড়াসহ শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা তাদের পণ্য, খাবার, জীবনাচার, পোষাক নিয়ে অংশগ্রহণ করবেন।
পাহাড় আর হাওড়বেষ্টিত জেলায় দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড, হামহাম জলপ্রপাত, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, সবুজ চা-বাগান, খাসিয়াপল্লি, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, চা-গবেষণা কেন্দ্র, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি, মুরইছড়া ইকোপার্ক, গগণটিলা, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মুন ব্যারাজ ও রাজনগরের কমলা রানির দিঘিসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে।
তাই শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকরা ঘোরাঘুরি করছেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রকৃতির সঙ্গে মিলে মিশে আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি একে অন্যের ছবি তুলছেন ভ্রমণের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে।
মৌলভীবাজার ট্যুর গাইডরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এপর্যন্ত দেশি বিদেশি পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে। ডিসেম্বর মাসে জেলার সবকটি হোটেল রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউসগুলো ফুল বুকিং ছিল। আশা করছি নতুন বছরের শুরুতেই পর্যটনখাতে ভালো ব্যবসা হবে।
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট প্রধান নির্বাহী মো. শাহিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিনের মন্দাভাবের পর প্রত্যাশানুযায়ী পর্যটকরা আসছেন। স্টাফরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে অতিথিদের সেবায়। পর্যটকদের বরণ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিমত, শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু ও রাস্তাঘাট তৈরি করলে পর্যটকের কাছে এই জেলা আরও আর্কষণীয় হবে। পর্যটনখাতকে আকর্ষণীয় করতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, “জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে ফেস্টিভালের মাধ্যমে। পর্যটনখাতকে চাঙা করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।”