পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
মীরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মহামায়া লেক গড়ে উঠেছে। একদিনেই আপনি মহামায়া লেক ভ্রমণ করতে পারবেন তাও আবার খুব কম খরচে। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে মীরসরাই উপজেলার অবস্থান। মুহুরি নদী ফেনী ও নোয়াখালী জেলা থেকে এটিকে আলাদা করেছে। একে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারও বলা যায়। মীরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘির পাড়ের ঠিক উল্টো পাশের রাস্তাকেই রাবার ডেম বলে।
সেখান থেকে সিএনজিতে করে চলে যাবেন মহামায়া ইকো পার্কের গেটে। অথবা হেঁটে হেঁটেও যেতে পারেন। এতে আশেপাশের এলাকা দেখতে দেখতে যেতে পারবেন।
হেঁটে যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগবে। গেট থেকে ইকো পার্কে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটুন। ইকো পার্কে প্রবেশ করতেই চারদিকের সবুজের নিপোবনে নিজেকে আবিষ্কার করে এক স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করবেন।
এর আশেপাশে মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ের দেখা মিলবে। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মহামায়া লেকে যাওয়ার রাস্তাটি। এই রাস্তা ধরে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন কাক্সিক্ষত মহামায়া লেকে মহামায়া লেকের রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে যতই বলা হোক না কেন, নিজ চোখে না দেখলে সেটা আসলে বোঝানো সম্ভব না।
যেন কোনো শিল্পীর সুনিপুণ হাতের রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবির ক্যানভাস। এতটাই সুন্দর চারদিকে। হালকা সবুজাভ স্বচ্ছ পানি, পানির উপর চারদিকের সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি, অসাধারণ প্রতিটি দৃশ্য। বর্ণনাতীত সেই অনুভ‚তি। লেকের পাড়ের নির্মল আর বিশুদ্ধ বাতাস আপনার শরীর ও মনকে মুহূর্তেই সতেজ করে তুলবে।
মূলত এ এলাকার জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল নিরসন ও শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড মহামায়া সেচ প্রকল্প চালু করেন। এর অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে মহামায়া খালের ওপর স্লুইস গেট স্থাপন করে। এভাবেই সৃষ্টি হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া।
মূলত এটি একটি সেচ প্রকল্প। লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালী ছাড়াও এখানে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা রয়েছে। বোটে চড়ে লেকে ঘুরার পাশাপাশি চাইলে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্নার শীতল পানিতে ভিজে শরীর ও মনকে প্রশান্তি দিতে পারেন।
এখানে আপনি প্রাকৃতিক মনোরম একটি পরিবেশ পাবেন। মহামায়া লেকে আছে কায়াকিং করার সুবিধা এবং চাইলে তাবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতেও পারবেন।
মহামায়া লেকে যা দেখবেন
পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি দেখতে অপরূপ সুন্দর। ছোট বড় অসংখ্যা পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই মহামায়া লেক। এই লেকের অন্যতম আর্কষণ হচ্ছে পাহাড়ি ঝরনা এবং এর স্বচ্ছ পানি। এর জলাধারের চারপাশে দেখলে মনে হবে সবুজের চাদর বিছানো রয়েছে।
আপনার মনে হবে যেন কোনো এক শিল্পীর সুনিপুণ ছবি। মহামায়া লেকের নীল জলরাশিতে আপনি ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা দেখতে পাবেন। এই নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আপনি লেকের স্বচ্ছ পানিতে ঘুরতে পারেন এবং হারিয়ে যেতে পারেন লেকের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে।
নৌকাতে বসে মহামায়া লেকের চারপাশের পাহাড় ও বিশাল জলরাশি আপনাদের মুগ্ধ করে তুলবে। বিকেল বেলা সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায় ডুবে যায় তখন লেকের পরিবেশটি খুবই চমৎকার লাগে।
পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে পিকনিকের জন্য মহামায়া লেক দারুণ একটি স্থান। আপনি চাইলে এখানে রান্নাবান্না করেও খেতে পারবেন। লেকের পাড়ের বিশাল ভূমিতে চাইলে ছোট বড় সবাই মিলে বিভিন্ন খেলারও আয়োজন করতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম মানে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর। মহামায়া লেক ভ্রমণের পাশাপাশি আপনি চাইলে এর আশেপাশে দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারেন। মহামায়া লেকের আশেপাশে আরো নানান আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে।
মহামায়া লেক ভ্রমণের পাশাপাশি আপনি সেগুলোও ভ্রমণ করতে পারেন। মহামায়া লেক ভ্রমণ করেও মিরসরাই ও সীতাকুন্ডের আশেপাশে যে সকল স্থান দেখতে পারেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হলো- সীতাকুন্ড ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, বাঁশবাড়িয়া সি বিচ, গুলিয়াখালি সি বিচ ও কুমিরা সদ্বীপ ঘাট।