বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন নগর কক্সবাজারে সড়ক ও বিমানপথে এতদিন যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও রেলপথে কোনো যাতায়াতের উপায় ছিল না। মাস দুয়েকের মধ্যে কক্সবাজারের পথে ট্রেনের ‘ট্রায়াল’ শুরু হতে যাচ্ছে, আর বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে এই বছরের মধ্যেই।
এর মধ্যেই সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণাধীন ‘ঝিনুকাকৃতির’ রেলস্টেশনও চালু হবে। সেখানে সমুদ্রের গর্জন আর রেলের ঝিকঝিক শব্দের ঐকতান একসঙ্গে শুনতে পারবেন পর্যটকরা।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এই স্টেশন। পুরো স্টেশনটি গড়ে উঠছে ২৯ একর জমির ওপর। স্টেশন ভবনটির আয়তন হবে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট।
স্টেশনটি পড়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায়। সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছয়তলা স্টেশন ভবনের চারতলা পর্যন্ত মূল কাঠামোর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। স্টেশন ভবন ছাড়াও আরও ১৭টি স্থাপনা তৈরি করার কাজও শেষ, যেগুলো ব্যবহার করা হবে রেলওয়ের পরিচালনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে।
কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্টেশনটিতে যাত্রী প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পথ। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের বড় জায়গা।
স্টেশনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন এই রেলপথ চালু হলে পর্যটকেরা চাইলে হোটেল ভাড়া না করেই কক্সবাজার ভ্রমণ করে ফিরে আসতে পারবেন। স্টেশনে পাঁচশর মত লাগেজ রাখার জায়গা রাখা হচ্ছে। পর্যটকেরা ভাড়া দিয়ে সেখানে মালামাল রেখে সমুদ্রসৈকত ঘুরে ফের ট্রেনে চেপে ফিরতে পারবেন।
প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম বলেন, ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করতেই ২১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রানের চেষ্টা
তিনি বলেন, সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগে ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগতে পারে।
আবুল কালাম আরও বলেন, আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও কমার্শিয়ালি যেতে আরও দুই-তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পুরোদমে চালু হলে ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেইসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। তবে এখনও ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।
ভাড়া কেমন হবে জানতে চাইলে প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে আন্তঃনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মত, এখানে হয়ত ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।