লেখক: গবেষক ও পরিব্রাজক (অব. সরকারি কর্মকর্তা)
৯ জুন দুপুর ১২টায় বিমান লাহোরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটায় আমরা লাহোর বিমানবন্দরে অবতরণ করি। আমার কেন যেন ধারণা ছিল লাহোরে সবুজের নিশানা মিলবে না। বিমানবন্দর থেকে বাসে করে শহরের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আমার সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। বাংলা দেশের যে কোনো শহরের চেয়ে অনেক বেশি সবুজ এ শহর। রাজপথের দুপাশে সুদৃশ্য সবুজ বৃক্ষসারির শোভা বড়ই দৃষ্টিনন্দন।
লাহোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে (ওমর হল) আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ধুলায় ধূসরিত এক কমনরুম আমাদের থাকার জন্য দেয়া হয়। বাথরুমগুলি অপরিচ্ছন্ন, তেমনি আবার পানির স্বল্পতা। লাহোরে নেমে বিমানবন্দরে তেমন গরম অনুভব করিনি। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এসে দেখি অসহনীয় গরম। আমাদের সৌভাগ্য যে গরমে রাতে বাইরে শোয়ার জন্য প্রত্যেককে একটা করে ক্যাম্পখাট দেয়া হয়েছিল।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আমরা ঐতিহাসিক ‘শালিমার বাগ’ দেখতে বের হই। হল থেকে বের হয়ে দেখি, হলের গেটের পাশে এক হকার পাকা সতেজ মাল্টা বিক্রি করছে। পূর্ব পাকিস্তানে মাঝে মধ্যে কোন সময় মাল্টা পাওয়া গেলেও এরকম মানের মাল্টা কল্পনাও করা যায় না। আমি বেশ কিছু মাল্টা কিনি। আমার বন্ধুরা এসে হুড়োহুড়ি করে আমার হাত থেকে সব কেড়ে নেয়। দেশে যে একটা পুরোনো প্রবাদ আছে- যে কুল গাছে উঠে কুল পাড়ে তার কপালে কুল জোটে না, অন্যরাই সব খেয়ে ফেলে, সে খালি হাতে ফিরে। আমারও হলো সে অবস্থা। কি আর করা যাবে, রাগ দেখালে শাস্তির বহর আরও বেড়ে যাবে। হাসিমুখে বন্ধুদের এ অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
শালিমার বাগ দূরে মনে করে আমরা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ওখানে একজনকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল- ‘ইয়ে ত নাজদিগ হ্যায়, আবি এক ফার্লং কি দো ফার্লং হোগা, পায়দল মে চলা যাইয়ে’। তার কথা শুনে আমরা পায়দলেই রওনা হলাম। কিন্তু দুই ফার্লংয়ের বেশি হাঁটার পরও শালিমার বাগের কোনো পাত্তা নেই। তখন আরেক পথচারীকে জিজ্ঞাসা করলে সেও বলল- ‘আবি এক ফার্লং কি দো ফার্লং হোগা’। আরও অনেক দূর যাবার পর আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তার কাছ থেকেও একই উত্তর পাওয়া গেল। কি আশ্চর্য্য! মোহাম্মদ বিন তোঘলক বাংলাদেশে বিদ্রোহ দমন করে রাজধানী দিল্লিতে ফিরছিলেন। তখন নিজামউদ্দিন আউলিয়া বলেছিলেন- ‘দিল্লি দূরস্ত’। আমি নিশ্চিত তিনি লাহোরের বাসিন্দা ছিলেন না। তা না হলে তিনি বলতেন- বাংলা থেকে দিল্লি ‘এক ফার্লং কি দো ফার্লং হোগা’। যাহোক প্রায় চার মাইল হাঁটার পর শেষ পর্যন্ত শালিমার বাগের দেখা মিলল।
ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের প্রপৌত্র শাহজাদা সেলিম (পরে সম্রাট জাহাঙ্গীর) দিল্লির সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পরে কেমন করে শের আফগানকে হত্যা করে, তার সুন্দরী স্ত্রী মেহেরউন্নিসার পাণি গ্রহণ করে তাকে সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা দিয়েছিলেন, তা স্কুলপাঠ্য ইতিহাসে আছে। পারস্য সুন্দরী নুরজাহানের পিতা নিতান্ত ভাগ্যান্বেষণে ভারতে এসেছিলেন একমাত্র শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে। তখন কি তিনি কল্পনা করতে পেরেছিলেন- তার এই শিশুকন্যাই একদিন ভারতের সম্রাজ্ঞী হবেন এবং তারই অঙ্গুলি নির্দেশে মোগল সাম্রাজ্য ও মোগল সম্রাট পরিচালিত হবে।
তখন সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বের মধ্যাহ্নকাল। পাঞ্জাবের বিদ্রোহীরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিল, মোগল সৈন্যদের সাথে ছোটখাট সংঘর্ষ সব সময় লেগে রইলো। সম্রাট জাহাঙ্গীর ঠিক করলেন- তিনি নিজে কিছুদিন লাহোরে অবস্থান করে সমূলে বিদ্রোহীদের দমন করবেন। নারীসঙ্গ সুখ বিলাসী সম্রাট জাহাঙ্গীর যেখানেই যান সেখানেই থাকবে তার অন্তঃপুরিকার দল- সেটা অন্তঃপুর না হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হলেও। অন্তঃপুরিকাদের নিয়ে আমোদফুর্তি করার মত লাহোরে তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই নুরজাহানের নির্দেশে শালিমার বাগ নির্মিত হয়।
গ্রীষ্মের এক তপ্ত অপরাহ্ন বেলায় সুদূর বাংলা থেকে আগত আমরা ২১ জন যুবক দাঁড়ালাম ১৬৭৬ খৃষ্টাব্দে নির্মিত জগত আলো নুরজাহানের অমর কীর্তি বিখ্যাত শালিমার বাগের সামনে। আমাদের সবার মনে অদ্ভুত অনুভূতি। মনে মনে বললাম- ‘হে অতীত তুমি কথা কও’। পরক্ষণে মনে হলো- ইতিহাসের এক অনধিত অধ্যায় আমার চোখের সামনে খুলে গেল। এই শালিমার বাগের শান বাঁধানো চত্বরে, ফোয়ারার ধারে, গোলাপকুঞ্জের পাশে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কেটেছে কত বিনিদ্র রজনী, সুরা পানে আর বাইজি নাচে। এই শান বাঁধানো পাথর আর ফোয়ারা তার নিরব সাক্ষী। পাথরগুলিতে কান পাতলে এখনো শোনা যাবে বিস্মৃত অতীতের নানা অজানা কাহিনি, ইতিহাসে নেই এমন কত কথা।
পাক-ভারতের মোগল স্থাপত্য পৃথিবীর স্থাপত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই শালিমার বাগও মোগল স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। কৃত্রিম ফোয়ারাগুলির গঠনপ্রণালী সত্যি বিস্ময়ের উদ্রেক করে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রকৌশলীদের এর জ্ঞান ও পারদর্শিতা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারিনি।
পাঞ্জাব বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় সব শেষে। বৃটিশরা লাহোর দখল করার পর শালিমার বাগের একবার সংস্কার সাধন করা হয়। সম্রাজ্ঞী নুরজাহান আজ নেই, মোগল সাম্রাজ্যের হয়েছে পতন, বৃটিশ উপনিবেশিকতার হয়েছে অবসান। কিন্তু শালিমার বাগ আজও স্থির নিশ্চল হয়ে বিরাজ করছে লাহোরের প্রান্তসীমানায়। হয়তো শালিমার বাগের সেই পুরোনো বৈভব নেই, নেই সেই ‘পারসিয়ান গোলাপ’ কিংবা ‘বাংলাদেশের লোটাস’। তবু আজও যা আছে তা অতুলনীয়। আজও প্রত্যহ সন্ধ্যায় আসে বিদেশি পর্যটকরা, আসে লাহোরের প্রণয়ী-যুগলেরা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর দল, আসে স্কুল কলেজের নবীন তরুণের দল, ক্লিক ক্লিক করে ক্যামেরার স্পুল খালি করে ফিরে যায়।
পরিতৃপ্ত মন ও অনাবিল প্রশান্তি নিয়ে শালিমার বাগ থেকে বের হই। মনে হলো যেন ইতিহাসের এক অশরীরী ছায়া অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানাল।
১১ জুন সকাল ৮টা, প্রাতরাশ সারার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে আসি। এখানকার ক্যাফেটেরিয়ার আসবাবপত্র ও অন্যান্য ব্যবস্থাদি দেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার জংধরা লোহার চেয়ার ও মুন্সি মিঞার ভাঙা আলমারির ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠল। দেখলাম পূর্ব ও পশ্চিমের পার্থক্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে আমরা প্রথমে যাই ইত্তেফাক ফাউন্ড্রিতে। এরপর আমরা ‘রোড রিসার্স ইনস্টিটিউট’ ও ‘ইরিগেশন রিসার্স ল্যাবরেটরি’ পরিদর্শন করি। এসবের বিবরণ এখানে আর দিলাম না।
বেলা সাড়ে ১১টায় আমরা চলেছি ঝিলাম নদীর ওপর দিয়ে জগত আলো নুরজাহানের সমাধির পানে। লাহোর শহরের অনতি দূরে ঝিলাম নদীর তীরে ঝাউবনের মাঝে মোগল সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের সমাধি। নসিব চিরদিন নুরজাহানের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ‘মরুভূমির শুষ্ক বুকে গরিব ঘরে জন্মেও তোমারই অঙ্গুলি হেলনে মোগল সাম্রাজ্য পরিচালিত হয়েছিল। আবার নসিব তোমাকে টেনে এনেছে এখানে। তোমার কবরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মোগলদের সবচেয়ে দরিদ্রতম স্মৃতিসৌধ। গরিব বাপের গরিব মেয়ের এই তো উপযুক্ত সমাধি।’ দৈন্যদশার নির্মমতায় গড়ে উঠেছিল যে জীবন, সায়াহ্নে আবার সে অবস্থায় ফিরে গিয়েছিল। তাই আজ-
‘লাহোরের শহরতলির কাঁটাবনের আবডালে,
লুপ্ত তোমার রূপের লহর জঙ্গলে আর জঞ্জালে।
জীর্ণ তোমার সমাধি আজ, মিনার বাহার যায় ঝরি,
আজকে তুমি নিরাভরন চিরদিনের সুন্দরী।’ -(সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।
আমরা সবাই গিয়ে দাঁড়ালাম মোগল যুগের তিলোত্তমার দীনদরিদ্র সমাধির সামনে। কবির ভাষায় বললাম-
‘বাংলা থেকে দেখতে এলাম মরুভূমির গোলাপ ফুল,
ইরান দেশের শকুন্তলা কই সে তোমার রূপ অতূল?
পাষাণ কবর বোরখা খোল দেখব তোমায় সুন্দরী,
দাঁড়াও শোভার বৈজয়ন্তী ভুবন বিজয় রূপ ধরি।’ -(স. দ.)
নুরজাহানের কবরের শিয়রে ফারসি ভাষায় লেখা আছে এক অশ্রুভরা করুণ শ্লোক-
‘বর ম্যাজারে গরিবাঁ ন্য চেরাগে ন্য গুলে
ন্য পরে পরমানা সুজদ ন্য স্যাতায়ে বুলবুলে।’
‘সত্যি তোমার কবরে আজ দীপ জ্বলে না নুরজাহান,
সত্যি কাঁটার জঙ্গলে পুষ্পলতার লুপ্ত প্রাণ।’
প্রিয়তমা পত্নীর সমাধির অনতি দূরে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধি, যার নাম ‘জাহাঙ্গীর ঠোম্ব’। মৃত্যুর পূর্বে সম্রাট জাহাঙ্গীর কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা জানি না। সম্রাট জাহাঙ্গীর হয়তো চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে, হয়তো চেয়েছিলেন, প্রিয়তমার দীর্ঘশ্বাস তার সমাধির ওপর গিয়ে পৌঁছাক।
জাহাঙ্গীর ঠোম্বে এসে দেখি একদল মেয়ে ফোয়ারার ধারে বসে একে অন্যকে পানি ছিটাচ্ছে। ঠোম্ব এলাকার সম্মুখ প্রাঙ্গণ তাদের কলকাকলিতে মুখর। লাহোরের কোনো এক মহিলা কলেজের ছাত্রীরা এসেছে বনভোজনে। তবে এটাকে বনভোজন না বলে বাগানভোজন বলাই হবে ঠিক। মোগলদের অন্যান্য সৌধের থেকে এটা পৃথক কিছু নয়। মূল সমাধির গঠন অনেকটা আগ্রার সম্রাট আকবরের সমাধির মতো, চারদিকের বাগান, ফোয়ারা ও প্রবেশপথ তাজমহলের অনুরূপ।
মধ্যাহ্নভোজনটা মধ্যাহ্নের অনেক পরে সমাপন করে আমরা বাদশাহি মসজিদে যাচ্ছিলাম। পথে সুন্দর একটি মিনার দেখে ওটা ভালো করে দেখার জন্য নেমে পড়ি। এটি হলো- ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যে ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ গৃহীত হয়, তারই স্মৃতিসৌধ ১৯৪ ফুট উচ্চ সুরম্য মিনার ‘মিনার-ই-পাকিস্তান’।
এরপর আমরা আসি বাদশাহি মসজিদে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অতি সুদৃশ্য এই মুসলিম উপসনাগারটি নির্মাণ করেন ভাতৃরক্তে কলুষিত, পিতৃহন্থা সম্রাট আওরঙ্গজেব। প্রতি সন্ধ্যায় এর সুউচ্চ মিনার থেকে ধ্বনিত হয় আজানের সুর, প্রত্যহ শত শত ধর্মপ্রাণ লোক এ এবাদতখানায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। হয়তো কেউ কেউ শ্রদ্ধা জানায় এর নির্মাতা পীর আলমগীরকে। বিদেশি পর্যটকরা আসে মধ্যযুগের বিরাট কীর্তিকে সচক্ষে দেখতে, আসে স্থাপত্যকলার পূজারিরা। দেখে তাদের চোখ জুড়ায়, তৃপ্ত হয় মন।
গঠন পরিপাঠ্যে, সৌন্দর্যে ও আকারে এটি দিল্লির জুমা মসজিদকে হার মানায়। মসজিদের ভেতর-বাহির খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে তকতকে। সামনে বিরাট তোরণ, চারদিকে উচ্চ প্রাচীর। চার কোণে চারটি সুউচ্চ মিনার, মাঝখানে তিনটি বড় বড় গম্বুজ নিয়ে মূল মসজিদ। কোণার উচ্চ মিনারগুলি থেকে লাহোর শহরের তিন চতুর্থাংশ দৃশ্যমান হয়। আমরাও একটি মিনারে উঠে সে দৃশ্য দেখি।
বাদশাহি মসজিদের অল্প দূরে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে শিখদের লাহোর বিজয়ের চিহ্ন ধারণ করে শ্বেতপাথরের নির্মিত একটি অপূর্ব সুন্দর গুরদোয়ারা। এককালে নাকি এর চূড়াটি স্বর্ণ দিয়ে মোড়া ছিল রেঙ্গুনের সোয়েডাগন পেগোডার মতো।
বাদশাহি মসজিদ থেকে আমরা যাই লাহোর কেল্লায়। কেল্লাটি সম্রাট আকবর নির্মিত। কেল্লাটি দিল্লির লালকেল্লা বা আগ্রাফোর্টের চেয়ে অনেক ছোট। গঠন শৈলী ও সৌন্দর্যেও অনেক নীচু মানের। যারা দিল্লির লালকেল্লা বা আগ্রাফোর্ট দেখেনি, তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবে এটাই খুব দর্শনীয়। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম সম্রাটের দরবার, বেগমদের বিভিন্ন মহল, অমাত্য ও সেনাপতিদের বিভিন্ন ওয়ার্ড। এক জায়গায় আছে একটি সুড়ঙ্গের মতো পথ, সামনে লোহার দরজা। এটা রাজবন্দিদের সেল। নেই আলো বাতাস প্রবেশের কোনো পথ। লৌহ কপাটের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো- সেলের অভ্যন্তর থেকে কত অভিশপ্ত আত্মার গোঙানি ভেসে আসছে।
হয়তো লালকেল্লার এমনি একটা সেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সম্রাট শাহজাহান ও তার অতি আদরের কন্যা জাহানারাকে। এ রকম কোনো সুড়ঙ্গ দিয়ে গড়িয়ে পাঠিয়েছিল, প্রিয়তম পুত্রের খ্যাতি মস্তক তার পিতার ক্রোড়ে। চোখের সামনে ইতিহাসের পাতা খুলে গেল, পিছিয়ে গেলাম পাঁচ/ছয়শ বছর আগের এক অপরাহ্ন বেলায়। ইতিহাসের অনধিত অধ্যায় করুণ মিনতি জানাচ্ছে, আরও করুণ আরও হৃদয়বিদারক কাহিনি শোনার জন্য।