৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুজিবের বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল ২৬ মার্চ সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী স্মারক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
বইটির মুখবন্ধে বলা হয়েছে, বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিনশ্বর শ্রেষ্ঠ নাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য। আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন, তারই সফল রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ বিদেশি শাসকদের দ্বারা শোষিত হয়েছে। বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে বহুবার বাঙালি বিদ্রোহ করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। সেই অতৃপ্ত আকাক্সক্ষা পূরণে বাংলার মাটি, বাংলার পানি, বাংলার প্রাণ ও প্রকৃতির হাজার বছরের একাগ্র প্রার্থনায় এ ভূখণ্ডে জন্ম নেন বাংলার মুক্তিদূত শেখ মুজিবুর রহমান।
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্ম একটি বিরল ঘটনা। যার জন্ম না হলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের কোনো ভূখ-ের চিত্র অঙ্কিত হত না। তিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নকে সফল করেছেন।
মহান পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃত স্থপতি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশের অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করেছেন। তিনি জাতিকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের পরিচয় বহনকারী জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় প্রতীক আমাদের দিয়ে গেছেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন দক্ষতার সাথে।
জাতিসংঘ এবং এর সকল সংস্থার সদস্য পদ অর্জন, অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন, পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রণিধানযোগ্য একটি বৈদেশিক নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ প্রণয়ন করেছেন। ভেঙে পড়া অর্থনীতির চাকাকে চালু করা, খাদ্য সাহায্য ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং অর্থনৈতিকভাবে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে তিনি একের পর এক নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং তার বাস্তবায়ন করেছেন। আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তবে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা সেদিনের বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদনের অংশ হিসেবে তারা পর্যটন কান্ট্রি ব্র্যান্ডনেম হিসেবে ‘Mujib’s Bangladesh’ নির্ধারণ করেছে এবং পর্যটন বিষয়ক সকল ধরনের প্রচার-প্রচারণায় কান্ট্রি ব্র্যান্ডনেম ‘Mujib’s Bangladesh’ ব্যবহার করেছে। বিশ^বাসীর কাছে বাংলাদেশের পরিচিতিকে তুলে ধরা ও পর্যটন শিল্পের প্রচার ও বিপণনে বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব ও ইমেজ এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিশীলা হিসেবে কাজ করবে বলে তাদের বিশ্বাস। ইতোমধ্যে ‘Mujib’s Bangladesh’ এর লোগো, স্মারক, ডাকটিকিট অবমুক্ত এবং খাম উন্মুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পর্যটন প্রচারণা কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ‘Mujib’s Bangladesh’ লোগোতে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি, লোগোতে ব্যবহৃত রং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বাংলাদেশের গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পর্যটকদের অনুভব করতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপদান করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান নতুন মাত্রায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে উপস্থাপিত হবে।