পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বাংলাদেশ থেকে সহজে ও কম খরচে ভ্রমণ করা যায় বলে পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে সিকিমের অবস্থান। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল সিকিমে প্রবেশের পথ। এই প্রবেশ পথ খুলে দেয়ার কারণে সিকিমসহ দার্জিলিং পাহাড়ে পর্যটক সংখ্যা বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।
এই রাজ্যের দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ং, মিরিক, সান্দাকফু তো বটেই, এখন গ্যাংটক, লাচুং, ইয়ামথাং, লাচেন ও ছাংগুতেও পা পড়ছে বাংলাদেশি পর্যটকদের।
কী দেখবেন
ঘুরে দেখার মতো প্রচুর জায়গা রয়েছে সিকিমে। ভালোভাবে দেখতে হলে সময় লাগবে। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের তথ্য ও বিবরণ দেয়া হলো।
গ্যাংটক
সিকিম রাজ্যের রাজধানী শহর হলো গ্যাংটক। এটি মূলত পূর্ব সিকিমের অন্তর্গত। গোটা শহরটি যেন পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে। তিব্বতীয় বৌদ্ধ কেন্দ্র ও সিকিমের হিমালয়ান শীর্ষ থেকে ট্র্যাকিং করার জন্য হাইকারদের বেজক্যাম্প হিসেবে পরিচিত গ্যাংটক। এখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মধ্যে তাশি ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও আশপাশের পাহাড় দেখা যায়। এখানে বান ঝাকরি ফলস দেখার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞাতও হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রাণী সম্বলিত সিকিম হিমালয়ান জ্যুওলজিক্যাল পার্ক, রুমটেক মনাস্ট্রি, এনসে মনাস্ট্রি, নাথু লা, রিডজ ফ্লাওয়ার পার্ক, সারামসা গার্ডেন, লহাসা ফলস ও গান্ধী মূর্তির মতো দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। আর গ্যাংটকের ক্যাম্পিং, রোপওয়ে, রাফটিং, ট্র্যাকিং ও হাইকিংয়ের সুযোগ তো পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
পেলিং
পশ্চিম সিকিমের ছোট শহর পেলিং। স্কাই ওয়াক পেলিংয়ে পাহাড়ের ওপর ঝুলন্ত ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজ দিয়ে মন্দিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অ্যাডভেঞ্চারের চেয়ে কম নয়। রিম্বি নদীর পাশে রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেনে এলাচ, কমলা ও কাঠবাদাম দেখতে পারবেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলসের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে অনেকেই এখানে আসেন।
লাচুং
গ্যাংটক থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লাচুং গ্রামে যেতে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ও ইয়ামথাং ভ্যালি যাওয়ার পথে তিস্তা নদীর স্বচ্ছ নীল পানি ও দুইটি অসাধারণ ঝরনা মনকে প্রশান্তি এনে দেবে। ইয়ামথাং ভ্যালি থেকে দূরের পাহাড়ে বরফের সন্ধান পাবেন। এখানে আপেল বাগান দিয়ে ঘেরা ১৯ শতকের বৌদ্ধ লাচুং মঠ রয়েছে। এছাড়া ভিম নালা ফলস, খান্দা ওয়াটার ফলস এবং ট্র্যাকিং করার জন্য রয়েছে পয়েন্ট।
সাঙ্গু লেক
গ্যাংটক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব সিকিমে অবস্থিত সাঙ্গু লেক। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩,৭৫৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই বরফের হ্রদ সিকিমের অন্যতম একটি পর্যটন স্থান। বিশেষ করে সাঙ্গু লেকে যাওয়ার রাস্তা অদ্ভুত সুন্দর। এখানের আবহাওয়া খুবই ঠান্ডা। যত ওপরের দিকে যাওয়া যায়, ঠান্ডার তীব্রতা তত বাড়তে থাকে। ফলের মধ্যে বরফ দিয়ে খেলা করার মজা এখানে না আসলে কখনো বোঝা যাবে না।
ইয়ুকসোম
পশ্চিম সিকিমের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর ইয়ুকসোম। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঝরনা, ছোট ছোট লেক ও বৌদ্ধমন্দির আছে। হাইকিং করার সুযোগও আছে।
ইয়ামথাং
ইয়ামথাং ভ্যালি সাধারণত ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস নামেও পরিচিত। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে জুনের মধ্য সময়ে বিভিন্ন রঙের ফুলে পুরো ভ্যালি ঢেকে থাকে।
এছাড়া লাচেনের মনাস্ট্রি, রাভাংলার বৌদ্ধপার্ক, রালাং মনাস্ট্রি, সানরাইজ ভিউ পয়েন্ট, নামছির হিলটপ মনাস্ট্রি, চার ধাম টেম্পল, কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক, ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক, আরিতার লেক ও ঋষি খোলা ফলস পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
কখন যাবেন
ফেব্রুয়ারি-মে এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত সিকিম যাওয়ার সবচেয়ে আদর্শ সময়। শীতকালে বরফে রাস্তা বন্ধ থাকার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া উত্তর সিকিমে সারা বছরই ধস নামে, আর বর্ষায় সিকিমের অনেক জায়গাতেই যাওয়া যায় না। দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিম এবং গ্যাংটককে সারা বছরই যাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন
বাসে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা। সেখানে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন শেষ হলে ভারত সীমান্তে ইমিগ্রেশন শেষ করে অটোতে ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে শিলিগুড়ি যেতে হবে। শিলিগুড়িতে সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট অফিসে গিয়ে ভ্রমণের অনুমতি নিতে হবে। শিলিগুড়ি থেকে সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটকের দূরত্ব ১১৪ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
গ্যাংটক, পেলিং, লাচুং এবং এমজি মার্গে থাকার জন্য অসংখ্য হোটেল, মোটেল ও হোমস্টে আছে। গ্যাংটকে থাকার জন্য হোটেল প্রিয়দর্শিনী, হোটেল উইলস, সোয়াঙ্গ ও হোটেল নিউ হোটেল সিকিম অন্যতম।
কী খাবেন
সিকিমে সব জিনিসই খুব পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও সতেজ। গ্যাংটকের এমজি মার্কেট, লালবাজার রোডে সস্তার মধ্যে মজার স্ট্রিট ফুড খেতে পারবেন। নিমথ, মামা’স কিচেন, ক্রাম্বস এন হুইপ্স, ক্যাফে রয়্যাল, গুপ্তা রেস্টুরেন্ট, লোকাল ক্যাফে, ও কাবুর মতো রেস্টুরেন্টে থুকমা, মম, গুনডরুক স্যুপ, শা ফালেয়, তিব্বতিয়ান ব্রেড ও লাচ্ছির মতো খাবারগুলো খেয়ে দেখতে পারেন।
জেনে নিন
সিকিমের অধিকাংশ মন্দির ও জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ। তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। গ্যাংটকে পাবলিক প্লেসে ধূমপান, আবর্জনা ও থুথু ফেলা আইনত দণ্ডীয় অপরাধ।