ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় ছিমছাম দোতলা এক বাড়ি। ১৯৬১ সালের ১ লা অক্টোবর এই বাড়িতে পদার্পন ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নশ্বর পৃথিবীতে তার ঠিকানা বলতে এটিই ছিলো।
বর্নাঢ্য রাজনৈতিক আর সুখি পারিবারিক জীবনের নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়ির পরতে পরতে। ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচন, ১৯৭১ এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, এই সবগুলোর ক্ষেত্রেই শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা প্রনয়ন, দলের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা শোনা এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি। দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা এই বাড়িতে ভিড় করেছেন ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে।
“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ৭ই মার্চের বিখ্যাত সেই ভাষণের রুপরেখাটি বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এখানকার কনফারেন্স টেবিলে বসে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি তখনও তিনি এই বাড়িটি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকেন। এই বাড়ি থেকে অসংখ্যবার পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। সর্বশেষে গ্রেপ্তার করেছিল ৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাতে। বলা হয়ে থাকে তিনি ধরা দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন তাঁকে না পেলে এই সৈন্যরা নিরস্ত্র জনগণের উপর নারকীয় তান্ডব চালাবে।
আর এই বাড়িতেই তাঁকে স্বপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে এবং নাম দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। কয়েক ধাপে জাদুঘরটির উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম এবং বর্তমান পর্যায়ে একতলায় দুটি এবং দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ জাদুঘরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কক্ষযুক্ত হবে। মূল ভবনের পেছনে চার তলা একটি ভবন নির্মানের কথা রয়েছে জাদুঘরের জন্য। নতুন ভবনে একটি লাইব্রেরী ও অডিটোরিয়াম রয়েছে।
দর্শনীয় বিষয়
জাদুঘর ভবনটিতে ঢুকে এক তলাতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। একতলায় জাদুঘরটির প্রথম কক্ষটি ড্রইং রুম। এখানে ছবির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনালী সময়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলাপচারিতা ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এর পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পড়ার ঘর। এখানে বসে তিনি লেখালেখিও করতেন। সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে উপরে ওঠার সময় চোখ চলে যাবে সেই রাতের তান্ডবলীলার সংরক্ষিত নিদর্শনে। দেখবেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর ছবি।
দোতলায় গিয়ে পরপর পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু সহ পরিবারের বাকি সদস্যদের শয়নকক্ষ। এ কক্ষগুলোয় এখন প্রদর্শিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারবর্গের নানা স্মৃতি চিহ্ন। এখানে থাকা বিভিন্ন প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের খেলার জিনিস। যেমন- বল, হকিষ্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবি ইত্যাদি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তো রয়েছেই।
ঠিকানা
বঙ্গবন্ধু ভবন, বাড়ি-১০, রোড-৩২ (পুরাতন), ১১ (নতুন)।
ফোন- ৮৮-০২-৮১১০০৪৬, ফ্যাক্স- ৮৮-০২-৮৩১৩৮৬৬
টিকেট
> টিকেটের মূল্য ৫ টাকা।
> ৩ বছরের কম বয়সীদের কোন টিকেট লাগে না।
> শুক্রবার ১২ বছরের কমবয়সীদের কোন টিকেট লাগে না।
> টিকেট কাউন্টার প্রথম দরজার পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
সময়সূচী
> সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে।
> জাদুঘরটির সাপ্তাহিক বন্ধ বুধবার।
> শুক্রবার ও শনিবার ভিড় বেশি হয়।
লক্ষ্য করুন
> ভেতরে খাবার, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ করা বারণ। এসব কাউন্টারে জমা দিয়ে একটি টোকেন নিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
> গাড়ি পার্কিং সুবিধা নেই।
> জাদুঘরটিতে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম দুটি আলাদা পথ রয়েছে।
> জাদুঘরটিতে প্রবেশের সময় হাতের ডান পাশে টয়লেট পাওয়া যায়। এখানে পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য এ ব্যবস্থা রয়েছে।
> জাদুঘরটিতে গাইডের ব্যবস্থা আছে।
> তিন তলা ভবনটির একতলায় অফিস কক্ষ এবং একটি ক্ষুদ্র বিক্রয় কেন্দ্র আছে। এই বিক্রয় কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিন বিক্রি হয়।