পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
ঈদের ছুটির কারণে বেশিরভাগ জায়গাতেই এখন এত বেশি ভিড় যে, এই সময়টায় একটু আরাম করে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। তাই তো বেছে নিতে পারেন এমন কিছু দর্শনীয় স্থান, যাতে নেই ভিড়ের আনাগোনা— তবে সৌন্দর্য আর উপভোগের উপাদানের কমতি নেই এক বিন্দু। ভিড়কে ফাঁকি দিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে বেছে নিতে পারেন এই চারটি স্থান।
চীনা মাটির পাহাড়, নেত্রকোনা
নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের বিজয়পুরে অবস্থিত এই পাহাড়। মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা এই স্থানটি আরো দূর-দূরান্তের পাহাড়ের দেখাও পাইয়ে দেবে খুব সহজে। এই পাহাড়গুলো উচ্চতায় হয়তো খুব বেশিদূর এগোয়নি, তবে এদের চূড়ায় একবার উঠে গেলে রোমাঞ্চ আর সৌন্দর্যের অদ্ভুত মেলবন্ধনের দেখা মিলবে। আশপাশেই রয়েছে বেশকিছু হ্রদ। এর মধ্যে নীল পানির হ্রদের সঙ্গে পরিচয় হলে মিলবে এক প্রশান্তিময় নীল রঙের দেখা। নামের মান রেখে ছবির মতোই সুন্দর এ হ্রদ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
দেশের অন্যান্য পর্যটন স্থলের মতো এ জায়গায় অত বেশি মানুষ ঘুরতে যায় না বলেই এই সময়টায় নিরিবিলিতে দেখে আসতে পারেন প্রকৃতির এক গুপ্ত সৌন্দর্যময় স্থান। চাইলে ঢাকা থেকে একদিনের সফরেও ঘুরে আসা যায়। বাস, ট্রেন দুটোই আছে। তবে ভাড়া আর আরামের দিক দিয়ে চিন্তা করলে ট্রেন বেশি ভালো হবে যাতায়াতের জন্য।
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
এই মুহূর্তে কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন দুটোই ভিড়ে পর্যুদস্ত, ফলে প্রশান্তির বদলে মন আরো বেশি হাঁসফাঁস করবে ভিড়ের উচাটনে। তাই, আপনি বেছে নিতে পারেন ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপ। একদিকে বঙ্গোপসাগর, আর অন্য তিনদিকে মেঘনা নদীর ঢেউয়ে ঘেরা এ দ্বীপে প্রকৃতি যেন মন উজাড় করেই দিয়েছে। হরিণের অভয়ারণ্য, ম্যানগ্রোভ বন, সমুদ্রসৈকত ছাড়াও তাই আশপাশে দু চোখ ভরে দেখার দৃশ্যের অভাব হবে না।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বলে এ দ্বীপে যেতে হবে জলপথেই। ঢাকা সদরঘাট থেকে বেশ কিছু লঞ্চ ছেড়ে যায়। কেউ চাইলে বরিশাল দিয়ে, কিংবা সোজা ভোলার উদ্দেশে লঞ্চে উঠতে পারেন।
বগা লেক, বান্দরবান
পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবনে অবস্থিত বগা লেক আর সাঙ্গু নদী যেন প্রকৃতির আশীর্বাদস্বরূপ। শুধু দৃশ্যের আনন্দই নয়, এর দর্শনে মেলে মনের প্রশান্তিও। ঘন সবুজের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে সাঙ্গু বক্রঢেউ যেন এক দেশের সবচেয়ে রূপসী নদীর তকমা দিয়ে দেয়। এমন স্বচ্ছ পানির মধ্যদিয়ে নৌকায় ভেসে বেড়ালে মনে হবে, হয়তোবা মাটির একটু উপরে হাওয়াতেই ভাসছেন। ইচ্ছে করবে, একটু দূরে থাকা পাহাড়গুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে।
অন্যদিকে বগা লেক হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,২৪৬ ফুট উঁচুতে অবস্থিত প্রকৃতির এক আশ্চর্য সন্তান। দুর্দান্ত সব পাহাড়ের আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা বগা লেকের সঙ্গে মিশে আছে এক অদ্ভুত ড্রাগনের উপকথা। গল্পগুলো শুনে মনে হয় যেন উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা কাহিনী। আর এসব গল্পকথার জাদু বেড়ে শতগুণ হয়ে যায়, যখন এখানে যাওয়ার সময় পর্যটকরা ‘চান্দের গাড়ি’তে চড়েন।
বগা লেকের আশপাশে বেশ কিছু কটেজ রয়েছে, তাই চাইলে রাতটা সেখানেই কাটাতে পারেন। নৌভ্রমণের পাশাপাশি অনেকের বাকেট লিস্টে তাই বাড়তি উদযাপনে থাকে বারবিকিউ। আর যদি সময় করা যায়, আর একটু শরীরচর্চার ইচ্ছেও থেকে থাকে— তাহলে কেওক্রাডংয়ে ট্রেকিং তো রয়েছেই।
ভ্রমণের গন্তব্য যেটিই হোক, আনন্দ হোক নির্ভেজাল। এক দিনের মধ্যে একাধিক জায়গায় ঘুরবার জন্য যাতে তাড়াহুড়ার মধ্যে না থাকতে হয়, এটিও খেয়াল রাখুন।