পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
প্রাসাদের মূল অংশ এবং সংলগ্ন কিছু ভবন নির্মাণ করেছিলেন রাজা দয়ারাম রায়। রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায়ের আমলে ১৮৯৭ সালের ১০ জুন নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে তিনদিনব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের এক অধিবেশন আয়োজন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
অধিবেশনের শেষ দিন ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিটব্যাপী এক প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদানাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রকর্ম শিল্পী আর দেশি মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়িটি পুনর্নির্মাণ করেন।
সাড়ে ৪১ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাসাদটি পরিখা ও উঁচু প্রাচীরঘেরা। প্রাসাদের পূর্বপাশে পিরামিড আকৃতির চারতলা প্রবেশদ্বার রয়েছে যা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে এবং এর উপরে একটি ঘড়িও রয়েছে। মধ্যযুগীয় বাংলাদেশের অন্যান্য সামন্ত প্রাসাদের মতোই নাটোরের রাজবাড়িতে রয়েছে দীর্ঘ প্রবেশ পথ যার দু ধারে বোতল পামের সুবিন্যাস লক্ষণীয়।
নাটোরের ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়ার রাজবাড়ি বর্তমানে উত্তরা গণভবন। প্রায় তিনশত বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী দিঘাপতিয়া রাজবাড়িটি নাটোরের উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দয়ারাম রায়।
তিনি নাটোরের রাজা-মহারাজ রামজীবনের একান্ত অনুগত একজন দেওয়ান ছিলেন। নাটোর রাজ্যের উত্থানে দয়ারাম রায় অসামান্য ভূমিকা রাখায় ১৭০৬ সালের দিকে রাজা রামজীবন উপহার হিসেবে বাসস্থানের জন্য তাকে দিঘাপতিয়ায় কিছু জমি দান করেন। পরে জমিদার ও রাজা হওয়ার পর ১৭৩৪ সালে দয়ারাম রায় দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাসাদের প্রবেশ পথের চারিদিকে প্রাসাদঘেরা পরিখা যা পুরো রাজপ্রাসাদকে ঘিরে রেখেছে। ভেতরে বিশাল মাঠ ও গোলাপ বাগান, একপাশে গণপূর্ত অফিস। দ্বিতল হলুদ ভবনটি কুমার প্যালেস নামে পরিচিত। নিচতলাটি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহৃত হত। একটি একতলা তহশিল অফিস আছে। সে সময়কার চারটি কামান পরিলক্ষিত হয়। কামানগুলোর স্থাপনকাল ছিল ১৭৯৯ সাল।
বিশাল রাজদরবারসংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য তার স্মৃতির প্রতীক। প্রাসাদের ভেতর রয়েছে বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ভবনের মধ্যে জাদুঘর, বহু দর্শনীয় স্মৃতিস্তম্ভ, ভাস্কর্য ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য বিদ্যমান।
ইতালীয় গার্ডেন উত্তরা গণভবনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অংশ। গার্ডেনটির আসবাবপত্র রাজা দয়ারাম ইটালি থেকে আনিয়েছিলেন। উত্তরা গণভবন চত্বরে গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর, কেষ্টজির পুকুর নামে ছয়টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া গণভবনের ভেতরের চারপাশে সুপ্রশস্ত পরিখা রয়েছে। প্রতিটি পুকুর পরিখায় সানবাঁধানো একাধিক ঘাট আছে।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দিঘাপতিয়ার শেষ রাজা প্রতিভানাথ রায় দেশ ত্যাগ করে চলে যান। এসময় থেকে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার রাজবাড়িটি অধিগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন গভর্নর হাউসে রূপান্তরিত হয়।
উত্তরা গণভবন পরিদর্শনের সময়সূচী
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকলেও শীতকালে ৫টায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সপ্তাহের প্রতি রবিবার উত্তরা গণভবন বন্ধ থাকে। গণভবনের আঙিনায় প্রবেশ করতে ২০ টাকা মূল্যের টিকেট ক্রয় করতে হয়।
যেভাবে যাবেন
নাটোর বাস স্টপ কিংবা রেলস্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উত্তরা গণভবন যেতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে।