■ পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বিদেশ ভ্রমণ এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করব ৫টি দারুণ ভ্রমণ উপযোগী দেশের ভিসা নিয়ম, পর্যটন আকর্ষণ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, আনুমানিক খরচ সম্বন্ধে আলোচনা করব।
মালদ্বীপ
নীল জলরাশি, মুক্তার মতো বালি, আর রাজকীয় রিসোর্ট—এটাই মালদ্বীপ। বাংলাদেশি নাগরিকরা এখানে পান ৩০ দিনের অন-অ্যারাইভাল ভিসা। মালদ্বীপে প্রায় ১,২০০টির মতো দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২০০টিতে মানুষ বাস করে। মালদ্বীপের প্রধান আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলো হলো— পৃথিবীর সেরা সমুদ্র-গন্তব্য, পানির উপর ভাসমান রিসোর্ট, স্কুবা ডাইভিং, স্নোরকেলিং, হানিমুন ও বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্র। এছাড়া মালেতে ইসলামিক সেন্টার, হালুমালে দ্বীপ, মাফুশি আইল্যান্ড (বাজেট পর্যটকদের জন্য) রয়েছে।
আনুমানিক খরচ (৭ দিনের জন্য):
বিমান টিকিট: ৩০,০০০–৪০,০০০ টাকা (ঢাকা–মালে রিটার্ন)
হোটেল: ৩,০০০–২০,০০০ টাকা/রাত (লাক্সারি ও বাজেট ভেদে)
খাবার ও ঘোরাঘুরি: ৮,০০০–১৫,০০০ টাকা
ভুটান
বিশ্বের সবচেয়ে ‘হ্যাপি’ দেশ ভুটান। বাংলাদেশ থেকে এখানে যেতে হলে শুধু একটি পারমিট লাগে, ভিসার দরকার নেই। থিম্পু, বিশ্বের একমাত্র রাজধানী যেখানে এখনো কোনো ট্রাফিক লাইট নেই। আর শহরজুড়ে এমন শান্তি—চাইলেই হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন। বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফ্রি, তবে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় ট্রাভেল পারমিট নিতে হয়। দর্শনীয় স্থানগুলো হলো— টাইগার নেস্ট মঠ, থিম্পু শহরের দারুণ পরিকল্পিত প্রশাসনিক ভবন ও বৌদ্ধ মন্দির, পুনাখা জং ও মুজি নদী।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা → ফুয়েলশিলিং (সড়কপথে)
ঢাকা → পারো (দ্রুক এয়ারের ফ্লাইট)
আনুমানিক খরচ:
পারমিট ফি: ৫০০ টাকা
দৈনিক বাজেট: ৪,০০০–৬,০০০ টাকা
নেপাল
বাংলাদেশিরা শুধু একটি অন-অ্যারাইভাল পারমিট নিলেই নেপাল ভ্রমণ করতে পারেন। পৃথিবীর ১০টি উচ্চতম পর্বতের মধ্যে ৮টিই নেপালে! পাহাড়প্রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য। মূল আকর্ষণ: হিমালয় ও এভারেস্ট ভিউ; পোখারা লেক; পাহাড়ি গ্রাম; কাঠমান্ডুর ঐতিহ্যবাহী মন্দির।

যাতায়াত:
ঢাকা–কাঠমান্ডু বাস, ট্রেন ও ফ্লাইট (রিজেন্ট/হিমালয় এয়ার)
খরচ:
ফ্লাইট রিটার্ন: ২০,০০০–২৫,০০০ টাকা
হোটেল: ১,৫০০–৫,০০০ টাকা
ইন্দোনেশিয়া
বাংলাদেশিদের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় আছে ৩০ দিনের অন-অ্যারাইভাল ভিসা। বিশেষ করে বালি দ্বীপ, যেখানে প্রতিদিন চলে ছোট-বড় নানা উৎসব। সৈকত, সংস্কৃতি, খাবার—সব মিলিয়ে এটি এক রঙিন স্বপ্ন। বালি দ্বীপের সৈকত ও বন্য সৌন্দর্য; ইউবুদে বুদ্ধিস্ট ধ্যান কেন্দ্র ও ধানক্ষেত
এবং আগ্নেয়গিরি ও বানর বনে ভ্রমণ এখানকার প্রধান আকর্ষণ।
ঘোরার প্ল্যান:
বালি → কুটা, সেমিনিয়াক, উবুদ
লম্বক বা গিলি দ্বীপে যেতে পারেন স্পিডবোটে
মোটামুটি খরচ:
ফ্লাইট: ৪০,০০০–৬০,০০০ টাকা
থাকা: দিনে ২,০০০–১০,০০০ টাকা
বলিভিয়া
দক্ষিণ আমেরিকার হৃদয়ে অবস্থিত বলিভিয়া একটি বিস্ময়কর দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণ পাওয়া যায়। বলিভিয়া অনেক পর্যটকের কাছেই এখনও এক রহস্যময় ও অফবিট গন্তব্য। বিশেষ করে যারা নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চান—তাদের জন্য বলিভিয়া এক আদর্শ ভ্রমণস্থান। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বলিভিয়ায় অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ই-ভিসা সুবিধা পেতে পারেন। নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে ৯০ দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।
বলিভিয়ার প্রধান গন্তব্যগুলোর মধ্যে লা পাজ (বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতায় অবস্থিত রাজধানী); উইচস মার্কেট; ভ্যালি অব দ্য মুন; উইউনি (বিশ্বের বৃহত্তম লবণ মরুভূমি); সানরাইজ ও সানসেট দেখার জন্য স্বর্গীয় জায়গা; ঐতিহাসিক শহর ও সাংস্কৃতিক রাজধানী সুকরে; ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট; সাদা রঙের ঔপনিবেশিক স্থাপত্য; টিওয়ানাকু; লেক টিটিকাকা; আমাজন রেইনফরেস্ট।

খরচ:
ফ্লাইট (রিটার্ন) ১,২০,০০০–১,৫০,০০০ টাকা
হোটেল (৩★) ২৫,০০০–৪০,০০০ টাকা
অভ্যন্তরীণ পরিবহন ৮,০০০–১৫,০০০ টাকা
ট্যুর ও এন্ট্রি ফি ২০,০০০ টাকা
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অনেক সময় ভাবেন বিদেশ ভ্রমণ মানেই ইউরোপ, আমেরিকা বা জটিল ভিসা। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বের বহু চমৎকার দেশ রয়েছে যেগুলোতে বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়াই বা সহজ ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন। এই দেশগুলো শুধু প্রাকৃতিক বা ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ নয়, বরং নিরাপদ, অতিথিপরায়ণ এবং ট্যুরিস্ট-বান্ধব। তবে যে দেশেই যান যাত্রার আগে সেই দেশের অফিসিয়াল ভিসা নীতিমালা চেক করুন এবং ফ্লাইট বুকিং, হোটেল ও ইনসুরেন্স আগেই সেরে ফেলুন।