পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
যারা নিয়মিত দেশে-বিদেশে ব্যবসায়িক কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য ক্রেডিট কার্ড অত্যাবশ্যক। এছাড়া ভ্রমণে ক্রেডিট কার্ডের মূল সুবিধা হলো ঋণসীমা পর্যন্ত খরচ করে পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সুদ ছাড়াই ধার শোধ করা যায়। আছে আরও কিছু বাড়তি সুবিধা। বর্তমান সময়ে বিদেশভ্রমণ পরিকল্পনায় পর্যাপ্ত ডলার সংগ্রহ একটা বড় মাথাব্যথা।
ভিসা ও বিমান টিকিট থাকার পরও ব্যাংক থেকে ডলার পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। আবার মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার কিনতে গেলে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। এসব সমস্যায় ভ্রমণে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে ভালো একটা সমাধান । সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড থাকলে অতিরিক্ত নগদ ডলারও বহন করতে হয় না। কারণ, চাইলেই অনেক খরচের বিল দ্বৈত মুদ্রা বা ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড দিয়েই শোধ করা যায়। আবার ক্রেডিট কার্ডের ডলার রেট খোলা বাজারের দাম থেকে কম থাকে, যে কারণে কার্ডে খরচ করার পর অপেক্ষাকৃত কম রেটেই সেটা পরিশোধ করা যায়। এ ছাড়া ইদানীং কিস্তিতে ভ্রমণ খরচ পরিশোধ করার সুবিধাও দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকেরা সুদ ছাড়াই তিন মাস থেকে এক বছরের ইএমআই বা কিস্তিতে বিমানের টিকিটসহ পুরো ভ্রমণ খরচ পরিশোধের সুযোগ পান। এ তো গেল ক্রেডিট কার্ডের কিছু সাধারণ ভ্রমণ সুবিধা । এর বাইরে বিমান টিকিটে ছাড়, হোটেল বুকিংয়ে ছাড়, ভ্রমণ প্যাকেজে ছাড়সহ বিভিন্ন ব্যাংক নানাভাবে গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে । ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় সুবিধাটি হলো বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সময়ে লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারা । লাউঞ্জে নির্ভার অপেক্ষা, যত ইচ্ছা খাওয়া, ঘুম এমনকি গোসলেরও ব্যবস্থা থাকে। অনেক ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও সীমিত আকারে লাউঞ্জ সুবিধা দিয়ে থাকে। ব্যাংকগুলো তাদের কার্ড সেবার আওতায় মোটাদাগে গ্রাহককে তিন ধরনের কার্ড অফার করে থাকে। এগুলো হলো ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড গ্রাহককে নানা লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে। রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক অফার, ভ্রমণ সুবিধা এবং জীবনযাত্রার বিভিন্ন অফারের সঙ্গে অনেক সুবিধাসহ বিভিন্ন সেগমেন্টের ক্রেডিট কার্ড অফার করে ব্যাংকগুলো । এসব ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিভিন্ন খরচের ধরন এবং প্রয়োজনীয়তা মেটানোর লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড আপনাকে কী সুবিধা দিচ্ছে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার কার্ডের ক্যাটাগরি আর ব্যাংকের ওপর। সব ক্যাটাগরির কার্ড যেমন আপনাকে সব সুবিধা দেবে না, ঠিক তেমনি একই ক্যাটাগরির কার্ডে সব ব্যাংকও আপনাকে সমান সুবিধা নাও দিতে পারে। যেমন একই ব্যাংকের একই ক্যাটাগরির দুটি কার্ড থাকলে একটি কার্ড হয়তো বিমান টিকিটে নিয়মিত ছাড় অফার করে, আরেকটা কার্ড হয়তো নিত্যপণ্য কেনাকাটায় বেশি ছাড় অফার করে। এ জন্য আপনি যদি ভ্রমণকারী হন, তবে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখেশুনুেবুঝে ভ্রমণ অফার বেশি পাওয়া যায়, এমন কার্ড নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে একটু যাচাই করা বা কোনো অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
কীভাবে নেবেন
দেশে বর্তমানে ৪৩টির মতো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। প্রায় সবাই ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের মাধ্যমে কার্ড সেবা দিচ্ছে। কার্ড সেবাকে অভিনবত্ব দিতে অন্য ব্র্যান্ডের কার্ডও এনেছে কয়েকটি ব্যাংক ।
আপনি চাকরিজীবী হলে বেতনের অনুপাতে নির্দিষ্ট একটি ক্যাটাগরির ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করবে ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকে আপনার জমাকৃত অর্থের বিপরীতেও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। ব্যবসায়ীরাও ব্যাংকে তাদের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। এখন অনেক ব্যাংক কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ফ্রিল্যান্সারদেরও ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম অসুবিধা হলো ধার করা অর্থ সময়মতো পরিশোধ না করলে গুনতে হয় চড়া সুদ। সময়মতো সে ঋণ শোধ না হলে আইনি ঝামেলাও পোহাতে হতে পারে। তবে হিসাবি হতে পারলে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে আপনার ভ্রমণকে সাশ্রয়ী আর সহজ করার দারুণ উপায়।