পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বারাসত ইউনিয়ন পরিষদ ২০১৩ সাল থেকে সৈকতকে পর্যটন স্পট হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন একসময় বাংলাদেশে সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার এবং পতেঙ্গা সৈকতকে মনে করা হলেও বর্তমানে পর্যটকদের কাছে পারকি সৈকত বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে । বঙ্গবন্ধু টানেল হওয়ায় এই সৈকতে এখন পর্যটক বেড়েছে। পারকি সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর পড়ে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কি.মি.। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত । অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকী সমুদ্র সৈকত। পারকি একটি উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত । বারাসত ইউনিয়ন পরিষদ ২০১৩ সাল থেকে সৈকতকে পর্যটন স্পট হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা বাকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়ের দেখা মিলে । চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লি. এবং কাফকোর দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়ায়। পারকি সৈকতে যাওয়ার পথে কর্ণফুলী নদীর উপর প্রমোদতরীর আদলে নির্মিত নতুন ঝুলন্ত ব্রিজ চোখে পড়ে। বিচে ঢোকার পথে সরু রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। সৈকতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউবন রয়েছে।
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় কক্সবাজার বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত শীর্ষে অবস্থান করলেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কোন অংশেই কম নয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই সাগর সৈকতের সবুজ ঝাউবন, লাল কাঁকড়া ও নীলাভ জলরাশি যেন সর্বদা ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। স্থানীয়দের কাছে উপকূলীয় পার্কি সমুদ্র সৈকত ‘পারকির চর’ নামে পরিচিত। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পারকি সমুদ্র সৈকতে আছে স্পিড-বোট, সি-বাইক এবং হর্স রাইডিংয়ের আয়োজন। কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত হতে উত্তর দিকে হেঁটে গেলে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলি নদী মোহনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। অপ্রচলিত ভ্রমণ গন্তব্য পারকি সমুদ্র সৈকতকে সময়ের সাথে সাথে পর্যটকবান্ধব করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য দোকান নির্মাণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পারকি সৈকতের ভাগ্য বদলে দিয়েছে টানেল
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর থেকেই পারকি সৈকতে দর্শনার্থী বাড়ছে । এক সময় চট্টগ্রাম নগর থেকে দীর্ঘ পথ ঘুরে আনোয়ারা হয়ে পারকি সৈকতে আসতে সময় লাগত দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এখন কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেলের নিচ দিয়ে শহরের পতেঙ্গা থেকে আধা ঘণ্টারও কম সময়ে পারকি সৈকতে আসা যাচ্ছে। টানেল চালু হওয়ায় সহজে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারছেন পারকি সমুদ্র সৈকতে। ফলে এই সৈকতের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য। সৈকতের আশাপাশে ভালো হোটেল, মোটেল না থাকায় এখানে আসা পর্যটকদের সন্ধ্যা নামার আগে গন্তব্যে ফিরে যেতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, পারকি সৈকতকে অত্যাধুনিক পর্যটন স্পট বানাতে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স।
সতর্কতা
সমুদ্রস্নান করার জন্য জোয়ার-ভাটার সময়গুলো ভালো ভাবে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। সৈকতে পৌঁছানোর পর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ খবর করে নেওয়া উচিত। পানিতে সাঁতারের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সন্ধ্যার পরই সৈকতে একা না থাকায় ভালো । সৈকতে আলোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পড়তে পারেন ছিনতাইকারীর কবলেও।