হাওর-বাওর ও সমতলভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জ। মহাবীর ঈশা খাঁ’র স্মৃতি বিজড়িত এ কিশোরগঞ্জে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। ষোড়শ শতাব্দী অর্থাৎ মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি মহিলা কবি চন্দ্রাবতী ও অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
এছাড়াও রয়েছে ১৬শ শতকে সুলতানি আমলে নির্মাণ কুতুব শাহ মসজিদ, সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে ১৬৬৪ সালে নির্মিত শাহ মাহমুদ মসজিদ, মহাবীর ঈশা খাঁ’র দুর্গসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ ঐতিহাসিক স্থাপনাগেুলো দেখার জন্য প্রতিদিনিই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক পর্যটক।
মহাবীর ঈশা খাঁ’র সঙ্গে মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ এবং ইতিহাস আলোচিত মান সিংহের লড়াই এ জায়গাতেই ঘটেছিল। কিশোরগঞ্জ থেকে ২২ কিলোমিটার এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা হতে ৮ কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর গ্রামে ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত এ দুর্গের অবস্থান।
এগারোসিন্ধুর নামের পূর্বে জায়গাটি গঞ্জেরহাট নামে পরিচিত ছিল। ১১টি ছোট বড় খাল বা নদী এ গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরবর্তীতে এ জায়গা এগারসিন্দুর নামে পরিচিতি পায়। নদী পথে যোগাযোগ সহজ থাকায় তৎকালীন সময়ে এ এলাকা দ্রুত ব্যবসা বাণিজ্য ও বসবাসের স্থান হিসেবে প্রসার লাভ করে।
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এগারসিন্দুর দুগের্র মূল নির্মাতা হিসেবে রাজা আজাহবা, কোচ হাজং উপজাতি প্রধান বেবুধ রাজা ও রাজা গৌর গোবিন্দ এ তিন জনকে নিয়ে মতভেদ দেখা যায়। তবে আশেপাশে বেবুধ রাজার দীঘিসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারনে এ দুর্গের নির্মাতা হিসেবে তার নামই বেশী প্রচলিত। সুলতানী আমলের পর এগারসিন্দুর এলাকাটি বেবুধ রাজার দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ বেবুধ রাজাকে পরাজিত করে এগারসিন্দুর দুর্গটি দখল করেন।
মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ এবং ইতিহাস আলোচিত মান সিংহের লড়াই এ জায়গাতেই ঘটেছিল। কথিত আছে, ১৫৯৮ সালে ঈশা খাঁ সাথে যুদ্ধে মান সিংহের তলোয়ার ভেঙ্গে যায় তখন নিরস্ত্র মানসিংহকে ঈশা খাঁ তার হাতে নতুন অস্ত্র তুলে। ঈসা খাঁর এ মহানুববতায় মান সিংহ পরাজয় মেনে নেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের কারনে দুর্গটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। তবে দুর্গের ভেতরে উঁচু ঢিবি দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে কামান দাগানো হতো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পাকুন্দিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ চলাচল করে। থানারঘাট নামক জায়গাতে বাস থেকে নেমে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় খুব সহজেই এগারসিন্দুর যাওয়া যায়। এছাড়াও ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে (ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট ভেদে) ভাড়া ১৫০- ৩৭০ টাকা লাগতে পারে। (টিকেটের অনলাইন চার্জসহ)। পরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ১০০টাকা ভাড়ায় এগারসিন্দুর যাওয়া যাবে।
থাকা-খাওয়া
এখানে খাওয়া ও থাকার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে পাকুন্দিয়ায় কিছু সাধারণ মানের খাবার হোটেল ও একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। ভালো মানের খাবার ও থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে।