বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা নামক এলাকায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায়। তবে কবে নাগাদ এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায় ছিলেন গৌড় বংশীয় একজন ব্রাহ্মণ।
গৌড় বংশীয়রা যখন সম্রাট আকবরের কাছে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত হন। তখন এই ব্রাহ্মণ অর্থাৎ কৃষ্ণকান্ত বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা নামক এলাকা পালিয়ে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানে তার জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর একাধারে তার বংশধররা একের পর এক জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। এই জমিদার বংশের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য জমিদার রয়েছেন। তারা হলেন, ব্রজেশ্বর রায় চৌধুরী তারপর জমিদারী লাভ করেন তার পুত্র নবীন চন্দ্র রায় চৌধুরী। নবীন চন্দ্র রায়ের পর তার দুই পুত্র শরৎ চন্দ্র রায় ও বীপিন চন্দ্র রায় জমিদারীকে দুই ভাগ করে বড় তরফ ও ছোট তরফ নামে দুইজনে দুই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। এরপর বড় তরফের জমিদার শরৎ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর তার একমাত্র মেয়ে সুনিতি বালা দেবী বড় তরফ জমিদারী দেখাশুনা করেন। আর ছোট তরফের জমিদার বীপিন চন্দ্র রায়ের পর তার দুই পুত্র মনীদ্র চন্দ্র রায় ও জগৎ চন্দ্র রায় ছোট তরফের জমিদারীকে আরো দুই ভাগ করে আলাদাভাবে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন।
এরফলে এই জমিদার বংশের জমিদারী তিন ভাগে বিভক্ত হয়। তবে ছোট তরফের দুই জমিদার তাদের জমিদারী ঠিকমত পরিচালনা করতে পারলেও বড় তরফের জমিদার তার জমিদারী ঠিকমত পরিচালনা করতে পারেননি এবং ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা প্রদান করতে পারেননি। আর তাই বড় তরফের জমিদারী ১৯৪৬ সালে নিলামে উঠে যায়। যা মহারাজা কৃষাণ লাল সিংহ নামক একজন ক্রয় করেন। তবে বড় তরফের জমিদারী নিলামে বিক্রি হলেও ছোট তরফের দুই জমিদারের জমিদারী সুন্দরমতই চলতে থাকে। কিন্তু ভারতবর্ষ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বংশের জমিদারীর সমাপ্তি ঘটে।
পরে দুই জমিদার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই জমিদার মনিন্দ্র রায় ভারতের আসামে চলে যান। আর ছোট ভাই জমিদার জগৎচন্দ্র রায় তার জমিদার বাড়িতে থেকে যান এবং এই বাড়িতেই ১৯৬৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর একেএকে জমিদার বাড়ির সকল বংশধররা ভারতে চলে যান। আর এরপরই জমিদার বাড়ির সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
জমিদারদের বসবাসের জন্য একটি বাসভবন, অতিথিশালা, রাজদরবার, দুর্গামন্দির, মঠ ও গো-শালা তৈরি করা হয়েছিল। অযত্ন ও অবহেলার কারণে জমিদার বাড়ির সকল স্মৃতিচিহ্নই এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। জমিদার বাড়ির অনেক সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখন ভোগ দখল করে নিয়েছে।