পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
কলকাতা আজ যেন মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ নিজের নগরীতে পরিণত হয়েছে। কূটনৈতিকভাবে ছোটোখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও দুই বাংলার সাধারণ মানুষ একে অপরকে আপন করে নিয়েছে।
যেভাবে যাবেন
সড়ক পথে ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাস যাচ্ছে যশোরের বেনাপোল বন্দর হয়ে বাস ছাড়ে কমলাপুর থেকে। আবার ঢাকা থেকে বাসে বেনাপোল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বনগাঁ থেকে বাস, জিপ অথবা ট্রেনে করে ৮০ কিলোমিটার পথ কলকাতা পর্যন্ত যেতে পারেন। খরচ কিছুটা কম, তবে পরিশ্রম বেশি। ঢাকা থেকে নিয়মিতভাবে বিমান চলাচল করে- বিমান বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, জেট এয়ারওয়েজ ও কিং ফিসার এয়ারলাইন্স।
যেখানে থাকবেন
কলকাতায় যাওয়ার পর থাকার জায়গার অভাব নেই। প্রচুর হোটেল, মোটেল গেস্টহাউস রয়েছে কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায়। বিদেশিদের তথা বহিরাগতদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার জন্য এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। শেয়ালদা স্টেশনের পাশে রয়েছে হোটেল আশোক, টাওয়ার লজ, প্যারাডাইজ লজ ইত্যাদি। আবার হাওড়া হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল, তাজ হোটেল, পিয়ারলেস ইন, পার্ক হোটেল, হোটেল গুলশান ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। তবে এগুলো তারকা মানের এবং ব্যয়বহুল। নিউ মার্কেটের আশপাশে রয়েছে হোটেল ভিআইপি ইন্টারন্যাশনাল, ভিআইপি কন্টিনেন্টাল, হোটেল সম্রাট, প্রেসিডেন্সি হোটেল ইত্যাদি।
যা যা দেখবেন
ঘুরে দেখার মতো প্রচুর জায়গা রয়েছে কলকাতায়। ভালোভাবে দেখতে হলে সময় লাগবে। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের তথ্য ও বিবরণ দেয়া হলো।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে এটি নির্মিত হয়েছিল। মূল্যবান মর্মর পাথর ব্যবহার করে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। মহারানির ভিক্টোরিয়ার ব্যবহৃত অমূল্য সামগ্রী যেখানে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়।
বিড়লা প্লানেটরিয়াম
বিড়লা প্লানেটরিয়াম বা বিড়লা তারকাম-ল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পূর্বদিকে সেন্ট পালন গির্জার পাশেই অবস্থিত। এখানে সৌরজগৎ সম্পর্কিত অজস্র তথ্য প্রদর্শনী জানা যায়।
চিড়িয়াখানা
বেলভেয়ার রোডের ধারে আপিুরের চিড়িয়াখানা ভারত বিখ্যাত। চিড়িয়াখানার উল্টোদিকে মাছের অ্যাকুরিয়ামটি চিড়িয়াখানার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ- সাদা বাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বেবুন, জলহস্তী, শিম্পাঞ্জি, শ্বেত ভালুক, অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু ছাড়াও এখানে রয়েেেছ- দুর্লভ প্রজাতির হাঁস ও সাপ। বাঘ ও সিংহের যৌথ প্রজননের টাইগন আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
সায়েন্সসিটি
সায়েন্সসিটি কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান, কাগিরগরি ও প্রযুক্তির আধুনিকতম সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই বিজ্ঞান সিটি। কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে সায়েন্সসিটি যাওয়া যায়।
বিদ্যাসাগর সেতু
বিদ্যাসাগর সেতু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার এক বিস্ময়কর অবদান। রবীন্দ্র সেতুর চাপ লাঘব করার উদ্দেশ্যে এর দক্ষিণে হুগলি নদীর উপরই অত্যাশ্চর্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। এটি এশিয়ার দীর্ঘতম তারের রশিতে ঝুলন্ত সেতু।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
ইংরেজ আমলে কর্নেল কিও বোটানিক্যাল গার্ডেনের পত্তন করেন। প্রথম দিকে এটা ছিল মূলত উচ্চপদস্থ ইংরেজি কর্মচারীদের বিনোদন কেন্দ্র। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছ রয়েছে এখানে। প্রায় ৯০০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে এই বাগান। শহিদ মিনারের কাছ থেকে বাসে করে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া যায়।
জাদুঘর
ভারতের সবচেয়ে বড় এই জাদুঘর চৌরঙ্গী ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। মিসরের সাড়ে ৪ হাজার বছর আগের মমিও রয়েছে এই জাদুঘরে। ধর্মতলা থেকে পার্ক স্ট্রিগামী বাসে করে জাদুঘরে আসা যায়।
মার্বেল প্যালেস
১৮৫৫ সালে এই মার্বেল প্যালেসটি নির্মাণ করা হয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংগৃহীত বহু শিল্প বস্তুর সম্ভার রাখা হয়েছে এই প্যালেসে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও রাম মন্দিরের কাছে মুক্তরাম বাবু স্ট্রিটে অবস্থিত এই প্যালেসে। রাজেরন মালিকের বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত এটি। এছাড়া মেট্রো রেলওয়ে অর্থাৎ পাতাল রেল, ময়দান, বেলুর মাঠ, রবীন্দ্র সরোবর, রেসকোর্স, শহিদ মিনার, হাওড়া ব্রিজ, ইডেন গার্ডেন, গড়ের মাঠ ইত্যাদি স্থানগুলো পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে এবং ভ্রমণ স্মৃতিকোঠায় সারা জীবন মনে থাকবে।
কেনাকাটা ও খাবারদাবার
কলকাতা নিউ মার্কেট ও এর আশপাশে রয়েছে অনেক দোকানপাট। এছাড়া চাঁদনী চক, বড়বাজার, খিদিরপুর, ফ্যান্সি বাজার থেকেও কেনাকাটা করা যায়। আর খাবারদাবারের হোটেল রয়েছে এসব মার্কেট ঘিরেই।