“বেশির ভাগ হোটেলের অতিথিসংখ্যা ২-৩ শতাংশে নেমেছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়েছে অনেক হোটেল। করোনার আঘাতে এ খাতে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি বছর বাংলাদেশের হোটেলগুলোর ক্ষতি ৭,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে করোনাকালে বেকার হয়ে পড়ার আশংকা ৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী” -বিহা
করোনা মহামারির আঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেছে পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল শিল্পখাত। এই খাতটিকে বাঁচাতে ছয় দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা)। আজ বুধবার সকাল ১১টায় রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিহা নেতৃবৃন্দ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাওয়া এ খাত ও এর সাথে জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষ ও তার পরিজনদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিহা সভাপতি এইচএম হাকিম আলি। এরপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিহা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান খালেদ-উর-রহমান সানি। তিনি তার বক্তব্যে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৪.৪ শতাংশ যা অতি দ্রুত দুই অংকের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু করোনার আঘাতে এ খাতে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি বছরই বাংলাদেশের হোটেলগুলোর ক্ষতি ৭,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বেশির ভাগ হোটেলের অতিথিসংখ্যা ২-৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা স্মরণকালে সর্বনিম্ন। অনেক হোটেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হোটেলগুলো পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএটিএ) হিসেবে, বাংলাদেশে করোনাকালে বেকার হয়ে পড়ার হুমকির মুখে রয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নেও পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে জড়িয়ে আছে দেশের ভাবমূর্তি, আন্তর্জতিক সম্পর্ক ও জাতীয় অর্থনীতি। দুঃসহ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শেষ ভরসা হিসেবে আমরা ‘এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ ফর হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি’ ও এই খাত বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এর আগে পোশাক শিল্পে ক্ষতি নিরসনে সরকার ঘোষিত বিশেষ তহবিল জনমনে ব্যাপক প্রশংসা ও আশার সঞ্চার করেছে। আমরাও দেশের গৌরবজনক ভ‚মিকা রেখে আসা হোটেল তথা পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে চাই।
এ লক্ষ্যে আমাদের ছয়টি প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য পেশ করছি এখানে।
বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য হোটেল এবং রিসোর্টের বিপরীতে বিদ্যমান ঋণ এর লভ্যাংশ/সুদ মার্চ, ২০২০ হতে ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ এবং চলমান কিস্তি আগামী জুন, ২০২১ হতে চালুকরণ এবং কিস্তি চালুকরণের আগ পর্যন্ত সমস্ত লভ্যাংশ/সুদ স্থির করা।
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল এবং রিসোর্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ওপর অর্পিত মোট ৯% লভ্যাংশ/সুদ হারে (যাহা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪% এবং সরকার ৫%) পরিশোধের সময়সীমা ০৩ বছর মেয়াদী করা এবং ঋণ বিতরনের তারিখ হতে ১ (এক) বছর গ্রেস পিরিয়ড রেখে পরবর্তী ২ (দুই) বছরে পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করা।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সরকারি আদেশ অনুযায়ী লকডাউনে ছুটিতে যাওয়া হোটেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে ৫০০ কোটি টাকা তহবিল মাসিক বেতন ভিত্তিতে তাদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা।
আবাসিক হোটেলগুলোর মার্চ, ২০২০ হতে ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত সমস্ত ইউটিলিটি বিল ইলেকট্রিক/ওয়াসা এবং গ্যাস বিল মওকুফ করা।
সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার আওতাধীন আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের হোল্ডিং ট্যাক্স ২০২০-২০২১ পর্যন্ত মওকুফ করা।
আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে কর কর্তন মওকুফ করা।
তিনি বলেন, আপৎকালীন এ সময়ে এসব সুপারিশসমুহ দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে আশু ধ্বংসের হাত থেকে হোটেল খাতকে বাঁচিয়ে বিশ্বের কাছে মহামান্বিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা আশা করি অতি দ্রুত এ দুর্যোগ কাটিয়ে সরকারের সাহসী নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ফের নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে সমর্থ হবে।
সবশেষে প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিহা নেতৃবৃন্দ। এ সময় বিশেষভাবে উঠে আসে, সরকারের আহবানে সম্প্রতি কোভিড-১৯ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন হোটেলে রাখা হলেও এর ভাড়া বাবদ পাওনা বিপুল অর্থ এখনো অনাদায়ী থাকার বিষয়টি। এর ফলে আরো নাজুক দশা হয়ে গেছে হোটেলগুলোর। আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছেন এই খাতের ওপর নির্ভরশীল পেশাগত পর্যায়ে প্রশংসনীয় অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ তিন লাখের ওপর শ্রমিক-কর্মচারী।
এ সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বিহা সভাপতি হোটেল আগ্রাবাদের সিইও এইচএম হাকিম আলি, সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের আওতাধীন রেডিসন ব্ল ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন ও রেডিসন ব্ল চট্টগ্রাম বে ভিউর এমডি লে. জেনারেল সাব্বির আহমেদ (অব.), প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ফিন্যান্স) আসিফ আহমেদ, লং বিচ হোটেলের এমডি আবুল কালাম আজাদ, গোল্ডেন টিউলিপ দ্য গ্র্যান্ডমার্ক ঢাকার এমডি খালেদুর রহমান সানি, লেকশোর হোটেল গুলশানের এমডি কাজি তারেক শামস, আমারি ঢাকার এমডি ও সিইও অশোক কেজরিওয়াল, হোটেল লা ভিঞ্ছির এমডি এটিএম সাইদুল আলম, রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলের জিএম আজিম শাহ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসর্টস লিমিটেডের আওতাধীন দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা এবং হানসার সিইও সাখাওয়াত হোসেন, দ্য ওয়ে ঢাকার এমডি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ এবং বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস মায়ার সিইও রাশাদুল হোসেন চৌধুরী। এরপর অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ফের শুভেচ্ছা জানান বিহা সভাপতি এইচএম হাকিম আলি।
(সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)