পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কালো বালির সৈকত রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশ এবং তাদের বিখ্যাত কালো বালির সৈকত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ড আগ্নেয়গিরির দেশ হিসেবে পরিচিত, ফলে এখানে বেশ কয়েকটি কালো বালির সৈকত রয়েছে। এর মধ্যে—
রেইনিসফজারা সৈকত: আইসল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় কালো বালির সৈকত হলো রেইনিসফজারা। এটি দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত এবং এর অনন্য কালো বালি, বিশাল ব্যসাল্ট পাথরের স্তম্ভ এবং প্রবল ঢেউ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
ডায়মন্ড বিচ: জোকুলসরলন হিমবাহের কাছে অবস্থিত এই সৈকতটি তার চকচকে কালো বালির জন্য বিখ্যাত। এখানে বরফের টুকরো সমুদ্রতটে পড়ে থাকায় এটি দেখতে হীরার মতো ঝলমলে মনে হয়।
হাওয়াই, যুক্তরাষ্ট্র
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যা কালো বালির সৈকতের গঠনে ভূমিকা রেখেছে। যেমন—
পানালু’উ ব্ল্যাক স্যান্ড বিচ: হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডে অবস্থিত এই সৈকতটি সবচেয়ে বিখ্যাত কালো বালির সৈকতগুলোর মধ্যে একটি। এখানে বিশাল সমুদ্র কচ্ছপও দেখা যায়, যারা সৈকতের গরম বালিতে বিশ্রাম নেয়।
পোলোলু ভ্যালি বিচ: এটি বিগ আইল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত একটি সুন্দর ও প্রাকৃতিক সৈকত, যেখানে কালো বালির সাথে সবুজ উপত্যকার সৌন্দর্য মিশে রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত, তাই এখানে বেশ কিছু কালো বালির সৈকত রয়েছে। এগুলো হলো—
লভিনা বিচ: বালি দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত এই সৈকতটি সূর্যাস্তের সময় অত্যন্ত মনোরম হয়ে ওঠে। এটি ডলফিন দর্শনের জন্য বিখ্যাত।
আমেদ বিচ: বালির পূর্ব অংশে অবস্থিত এই সৈকতটি স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিং-এর জন্য জনপ্রিয়। কালো বালির সঙ্গে এখানে প্রবাল প্রাচীরও রয়েছে।
ইতালি
ইতালির আগ্নেয়গিরিসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকটি কালো বালির সৈকত রয়েছে। যেমন—
স্ট্রম্বোলি বিচ: সিসিলি দ্বীপের স্ট্রম্বোলি আগ্নেয়গিরির কাছেই এই সৈকতটি অবস্থিত। এটি বেশ নির্জন এবং প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত সুন্দর।
সান্টা সেবাস্টিয়ানো বিচ: নেপলসের কাছে অবস্থিত এই সৈকতটি কম পরিচিত হলেও এর কালো বালির সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
জাপান
জাপানে বেশ কিছু কালো বালির সৈকত রয়েছে, যা আগ্নেয়গিরির কারণে গঠিত হয়েছে।
নাগাসাকি কাইগান: এই সৈকতটি জাপানের কাগোশিমা অঞ্চলে অবস্থিত এবং আশেপাশের আগ্নেয়গিরির কারণে এর বালি কালো।
ইওজিমা বিচ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপে রয়েছে কালো বালির সৈকত, যা আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডেও বেশ কিছু সুন্দর কালো বালির সৈকত রয়েছে, বিশেষ করে উত্তর দ্বীপে। যেমন—
পিহা বিচ: অকল্যান্ডের কাছে অবস্থিত এই সৈকতটি তার কালো বালির জন্য বিখ্যাত। এটি সার্ফিং-এর জন্য জনপ্রিয় একটি স্থান।
ক্যারিওটাহি বিচ: নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে অবস্থিত এই সৈকতটি নির্জন পরিবেশ ও কালো বালির জন্য বিখ্যাত।
গ্রিস
গ্রিসের সান্টোরিনি দ্বীপে কালো বালির সৈকত রয়েছে, যা আগ্নেয়গিরির প্রভাবের কারণে গঠিত হয়েছে। এগুলো—
পেরিসা বিচ: এই সৈকতটি সান্টোরিনির অন্যতম জনপ্রিয় সৈকত এবং এখানে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান।
কামারি বিচ: এটিও সান্টোরিনিতে অবস্থিত একটি বিখ্যাত কালো বালির সৈকত, যেখানে দর্শনার্থীরা সূর্যস্নান ও সাঁতার উপভোগ করতে পারেন।
ফিলিপাইনস
ফিলিপাইনে বেশ কিছু কালো বালির সৈকত রয়েছে, যা আগ্নেয়গিরির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন—
আলবেই বিচ: লুজন দ্বীপের কাছে অবস্থিত এই সৈকতটি আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি হয়েছে এবং অত্যন্ত সুন্দর।
তালিসায় বিচ: বাটাঙ্গাস অঞ্চলে অবস্থিত এই সৈকতটি কালো বালির কারণে ভিন্ন এক সৌন্দর্য উপহার দেয়।
স্পেন
স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে বেশ কিছু কালো বালির সৈকত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
প্লায়া জার্দিন: টেনেরিফ দ্বীপে অবস্থিত এই সৈকতটি কালো বালির জন্য বিখ্যাত এবং এটি অত্যন্ত দর্শনীয়।
এল গলফো: লানজারোতে দ্বীপে অবস্থিত এই সৈকতটি তার কালো বালির পাশাপাশি সবুজ হ্রদের জন্যও জনপ্রিয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কালো বালির সৈকত রয়েছে, যা মূলত আগ্নেয়গিরির কারণে গঠিত হয়েছে। এসব সৈকত শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই ভরপুর নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণীয় পরিবেশও প্রদান করে। কালো বালির সৈকত ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা সাধারণ সাদা বা সোনালি বালির সৈকতের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
আপনি যদি অনন্য ও রোমাঞ্চকর ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তবে এসব কালো বালির সৈকত অবশ্যই আপনার তালিকায় রাখা উচিত।