পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
আরবি দরস অর্থ পাঠ করা বা পড়া। সেই অর্থে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দারসবাড়ি বা দারাসবাড়ি বলা হতো। এই দারাসবাড়ি মাদ্রাসার সুনামে এলাকার নাম ও মসজিদের নাম পাল্টে দারাসবাড়ি মসজিদ হয়ে যায়।
প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদিঘি এলাকায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে মহানন্দার তীর ধরে কয়েক কিলোমিটার ভেতর দিকে অবস্থিত। এটি তৎকালীন গৌড়-লখনৌতির বাংলাদেশ অংশে ঘোষপুর মৌজায় কোতোয়ালী দরওয়াজা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এক কিলোমিটার দূরে এবং ছোট সোনা কোতোয়ালী সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
দারাসবাড়ি মসজিদের ১৫০ মিটার পূর্বদিকে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি অবস্থিত।[৪] মসজিদটি এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। মাদ্রাসার পূর্ব ও পশ্চিমে দিকে দুটি পুকুর ছিলো, মাঝখানে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাচীন মাদ্রাসার নিদর্শন। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে ১৫০৪ সালের ১ রমজান তারিখে অথবা পঞ্চদশ শতকে সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের আমলে সুলতানের আদেশে এটি নির্মিত হয়।
বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ের ফিরোজপুর এলাকায় দারাস বাড়ী মাদ্রাসা নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন অঞ্চল হতে শিক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হতেন। বাংলার প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে বোখারি ও মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তাহ হাদিস শিক্ষা দেওয়া হতো। তবে হুসেন শাহ পরবর্তী সময়ে ঢাকার সোনারগাঁ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সিহাহ সিত্তাহ হাদিস শিক্ষা দেওয়া হতো। মোহাম্মদ বিন ইয়াজদান বখশ নামক এক আলেমকে দিয়ে বোখারী শরীফ নকল করিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুবিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়।
১৯৭০ দশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কৃষক কৃষি জমিতে লাঙল দিয়ে চাষ করতে গিয়ে আবির রং-এর ইটের সন্ধান পান। এরপরে স্থানীয় প্রশাসন খবর পেলে মাটি খুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান খুজে পান।
এই স্থাপনাটি বর্গাকারে নির্মিত। এর প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৫১.৫২ মিটার। এ স্থাপনার মাঝামাঝি অংশে ৩৭.৫০ মি. পরিমাপের বর্গাকার চত্বরের পশ্চিম বাহু ব্যতীত অপর তিন বাহুতে এক সারি করে প্রকোষ্ঠ এবং তিন বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে পাশাপাশি তিনটি ইমাম এর জন্য কোঠা আছে। নামাজের এই তিনটি কোঠার পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অবতল মেহরাব আছে।
পোড়ামাটির ফলক ও নকশাকার ইট দ্বারা দেয়ালগুলো অলংকৃত রয়েছে। এখানে মোট ৩৭টি কক্ষ রয়েছে, ১টি ওয়াক্তিয়া মসজিদ রয়েছে, ভবনের মধ্যখানে ১টি অধ্যক্ষের অফিস রুম রয়েছে। মাদ্রাসার মোট ৩টি দরজা রয়েছে যা এর অবশিষ্ঠাংশে এখনো স্পষ্ট আছে।
মাদ্রাসাটি দৈর্ঘ্যে ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। মাদ্রাসা ভবনের সঙ্গে ১০.৭ ফুট বিশিষ্ট বারান্দা রয়েছে। ভবনের পশ্চিমে কারুকার্য খচিত ৯টি মেহরাব রয়েছে। ভবনের উত্তর ও দক্ষিণে ৩টি করে জানালা রয়েছে। ভবনে নির্মাণশৈলী দেখে বুঝা যায় এতে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও ছিল, তবে সেটি বর্তমানে পাওয়া যায় না। ভবনের চারপাশের দেওয়াল পুরাতন হয়ে বর্তমানে কোনোরকম টিকে আছে।