প্রখ্যাত রাজনীতিক, মজলুম জননেতা নামে অভিহিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলাশহর থেকে ২ কিমি. উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ধানগড়া গ্রামে অবস্থিত। তিনি ১৮৮০ সালে এখানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মওলানা ভাসানী নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি এবং তার নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল কৃষক-শ্রমিক জনসাধারণ, যাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
ভাসানী ১২ বছর বয়সে টাঙ্গাইল চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ত্রিশের দশকের শেষদিকে তিনি আসামের ঘাগমারায় বসবাসকারী বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ঐ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাসানচরে বন্যার কবল থেকে বাঙালি কৃষকদের রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। ভাসানচরের জনসাধারণ তাকে ‘ভাসানী সাহেব’ বলে অভিহিত করে এবং পরবর্তীকালে এ উপাধি তার নামের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।
১৯৩৭ সালে ভাসানী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৫৭ সালে কাগমারি সম্মেলনের পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। এ সময় থেকে মওলানা ভাসানী বাম রাজনীতি অনুসরণ করতে থাকেন। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বহুবার গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী অপসারণে সোচ্চার হওয়া এবং ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে নেতৃত্বদান মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক। এই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ১৯৭৬ সালের ১৭ই নভেম্বর ঢাকায় ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে সমাহিত করা হয়।