পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
১৯৭৩-৭৪ সালে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে নরপতির ধাপ নামে পরিচিত ভাসু বিহারটির প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় প্রথমবারের মতো। এর ফলে পরবর্তী গুপ্তযুগের দুটি আয়তক্ষেত্রাকার বৌদ্ধ বিহার এবং একটি প্রায় ক্রুশাকৃতি মন্দির উন্মোচিত হয়েছে।
প্রথম বিহার উত্তর-দক্ষিণে ১৪৮.১৩ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৯ মিটার পরিমাপের প্রায় আয়তক্ষেত্রাকার বিহারটি পোড়া ইটের তৈরি। দুই ইটের মাঝখানে মর্টার হিসেবে কাদামাটির ব্যবহার লক্ষণীয়। ভূমি পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিহারটি প্রথম বিহারের প্রায় অনুরূপ এবং উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
উন্মুক্ত আঙিনার চারদিকের বারান্দাসংলগ্ন প্রথম বিহারে ২৬টি এবং দ্বিতীয় বিহারের ৩০টি কক্ষ আছে। প্রধান মন্দিরটি ছিল কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে, ২ নম্বর বিহারের দক্ষিণে এবং ১ নম্বর বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে। মন্দিরটিতে ধাপবিশিষ্ট সিঁড়ির প্রদক্ষিণ পথ আছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক উত্খননের ফলে বিহার এবং মন্দির স্থাপত্যের ভিত্তি ছাড়াও ব্রোঞ্জমূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অক্ষর খোদিত পোড়ামাটির সিল, অলংকৃত ইট এবং মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে।
কক্ষগুলোর অভ্যন্তর থেকে ৬০টিরও বেশি ব্রোঞ্জমূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে। পণ্ডিতদের মতে, মূর্তিগুলোর কিছু হয়তো বিহার নির্মাণ যুগের আগেই তৈরি এবং পরবর্তীকালে সেগুলো বিহারে রাখা হয়েছিল। সব মূর্তির পেছনে স্লাব ও উঁচু পেডেস্টাল ছিল। মূর্তিগুলোর মধ্যে বুদ্ধ, ধ্যানীবুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং বোধিশক্তি উল্লেখযোগ্য।
ভাসু বিহারে প্রাপ্ত মূর্তির দীর্ঘ হালকা-পাতলা শরীর, ক্ষীণ কটি, প্রশস্ত বুক এবং মার্জিত অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পালযুগের ধ্রুপদি শিল্পকলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ময়নামতির খাটো এবং মোটা, সরল এবং স্থূল প্রকৃতির মূর্তি থেকে ভাসু বিহারের নিদর্শনগুলো ভিন্নরূপের। এ ছাড়া ২৫০টির বেশি অক্ষর খোদিত সিল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এ পর্যন্ত ১০০টির বেশির পাঠোদ্ধার করা হয়েছে।
মানুষ, পাখি, বিভিন্ন প্রাণী, ফুল, লতাপাতা এবং জ্যামিতিক নকশা ছিল পোড়ামাটির ফলকের বিষয়বস্তু। পাহাড়পুর, ময়নামতিসহ অন্যান্য বৌদ্ধ স্থাপত্যের মতো ভাসু বিহারে ইট অলংকরণে পদ্মের পাপড়ি এবং ধাপ-পিরামিড বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।