পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
১৮৭৬ সালে চা বাগান মালিক ডব্লিও এ ক্যাম্পবেল চট্টগ্রাম ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৮৭৮ সালের ২৩ আগস্ট পুরাতন টেলিগ্রাফ কার্যালয়ের নিকট ক্লাবের স্থান নির্ধারিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন জমিদার রায় নিত্যানন্দ রায় বাহাদুর কর্তৃক পাইওনিয়ার হিলে বরাদ্দকৃত জমিতে ক্লাবের স্থান নির্ধারন করা হয়। ১৯০১ সালের ২৭ মার্চ ক্লাবটি চালু করা হলেও নিবন্ধিত কোম্পানি হিসাবে অনুমোদন লাভ করে ১৯০৮ সালে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনীকে সমগ্র এলাকাটির মালিকানা ৯৯ বছরের জন্য চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেডের পক্ষে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যা ২ জানুয়ারি ১৯৫৬ সাল থেকে এই চুক্তি কার্যকর হয়।
বর্তমানে এই ক্লাব ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসিক স্থল। ক্লাবের এক পাশে দিয়ে বয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী, অন্যপাশে শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং শাহীন গলফ ও কান্ট্রি ক্লাব। বোট ক্লাবের পাশ দিয়েই চলে গেছে বিমানবন্দর সড়ক।
বোট ক্লাবে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের আবাসন ব্যবস্থা। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ক্লাবটি পরিচালিত হওয়ায় এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নতমানের।
এখানে রয়েছে একটি অডিটরিয়াম, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সুব্যবস্থা রয়েছে। সামনে আছে বড় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, একসঙ্গে কয়েকশ গাড়ি পার্কিং করা যায়।
ক্লাবে সাধারণ সুবিধাগুলো মধ্যে রয়েছে গেস্ট হাউস কমপ্লেক্স, কেটারিং, বার, বেকস ও ফ্লেক্স, লন ক্যাফে, সি-ম্যাক্স সিনেমা হল, গ্রন্থাগার, সেলুন, ব্যাঙ্কুয়েট হল, পারিবারিক ডাইনিং হল, সম্মেলন কেন্দ্র, মিলনায়তন কক্ষ। পাশাপাশি ক্রীড়া সুবিধার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য ক্লাব, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, স্কোয়াশ, বাস্কেটবল, বিলিয়ার্ড ও স্নুকার, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, ফুটবলের ব্যবস্থা। ক্লাবটি বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ২০১২-১৩ সালে সদস্যদের জন্য একটি চার তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হয়।
নতুন বোট ক্লাব হাউসে রয়েছে সুসজ্জিত আধুনিক বার, বল রুম, কার্ড রুম, বিলিয়ার্ড সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স হল ও লাউঞ্জ। সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে সেইলিং, পুলিং, বোয়িং, অ্যাকুয়াটিক স্পোর্টস এবং সামাজিক মিলনের মাধ্যমে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন, সে জন্য এ ক্লাব কাজ করে। এটা শুধু বিনোদন কেন্দ্র নয়। পর্যটকদের তীর্থস্থান ও মিলনমেলা।
এই ক্লাবের রয়েছে ওয়েস্টার্ন ক্রুজ নামের প্রমোদতরী, যা ২০০ যাত্রী বহনে সক্ষম। নদীর পাশেই বোট ল্যান্ডিং স্টেশন। এই জাহাজে করে কর্ণফুলী নদীসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকায় ভ্রমণ করতে পারেন ভ্রমণকারীরা। এই বিলাসবহুল জাহাজ চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের জন্য গর্ব। ‘ওয়েস্টার্ন ক্রুজ’ চট্টগ্রামে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কারণ সাধারণ মানুষ এর মাধ্যমে আরও সহজ, বিলাসবহুল ও নিরাপদে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এর ফলে জাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাহাজটি প্রায় ৩২ মিটার লম্বা এবং ৮ দশমিক ৪ মিটার প্রশস্ত। এটি ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলাচল করে। জাহাজটিতে ভ্রমণকালে যাত্রীরা খাবার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের বিনোদনের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। শিশুদের জন্য আলাদা একটি কিডস কর্নার রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠান, সেমিনারসহ যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ‘ওয়েস্টার্ন ক্রুজ’ ব্যবহার করা যায়।