বিনোদনের জন্য দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য এবং মনোমুগ্ধকর ও মায়াবী প্রাকৃতিক নৈসর্গিক উপভোগে ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে এক হাজার দুইশর বেশি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র থাকলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি এখন প্রায় সারা বছর সরগরম থাকে দেশি পর্যটকদের পদচারণায়।
সুযোগ পেলেই পরিবার নিয়ে কিংবা দল বেঁধে এসব স্থানে ঘুরে বেড়ায় দেশের মানুষ। বাকি পর্যটন কেন্দ্রগুলো থাকে প্রায় পর্যটক শূন্য। এসব অজানা থাকে পর্যটকদের। তবে পর্যটনের আকাঙ্ক্ষা কিংবা পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেও দেশে সেই তুলনায় বাড়েনি পর্যটনকেন্দ্রিক অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা।
নির্দিষ্ট কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলোতে ভালো মানের আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি নানা কারণে। যা আছে তা যথেষ্ট নয়। নিরাপদ ভ্রমণও নিশ্চিত করা যায়নি।
সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো সম্প্রসারণ করতে জেলাভিত্তিক পর্যটনের উন্নয়ন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে দেশের পর্যটন আকর্ষণ ব্র্যান্ডিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং করা, খাবার ও আবাসনের মূল্য সব শ্রেণির পর্যটকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকসই পর্যটন বিনির্মাণের জন্য প্রাইভেট, পাবলিক ও কমিউনিটি পার্টনারশিপ খুবই প্রয়োজন। এসব নিশ্চিত করা গেলে দেশে পর্যটন শিল্পের আরো বেশি বিকাশ ঘটবে, দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন ভ্রমণে। এতে রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে, তেমনি আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে।
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা হোটেলসহ বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রিক আধুনিক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। এসব অবকাঠামোর মধ্যে প্রায় পুরোটাই বেসিরকারি পর্যায়ের।
বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভালো মানের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। কিছু গড়ে উঠলেও তা নিম্নমানের। এলাকাও অনিরাপদ। তাই পর্যটকদের সারাদিন ঘুরে দূরে কোনো জেলা শহরে গিয়ে রাত যাপন করতে হয়। আবার জেলা শহরগুলোতেও আবাসন ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ঢাকার বাইরে হোটেল-মোটেল আছে মাত্র ২৭টি। তাও অনেক বছরের পুরনো, মান তত উন্নত নয়। শুধু কক্সবাজারে বেসরকারি পর্যায়ে অন্তত ২০টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল-রিসোর্ট থাকলেও পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেল আছে মাত্র ৪টি।
দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ সুন্দরবন। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু সরকারিভাবে বিভাগীয় এ শহরটিতে কোনো আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। এমনকি আশপাশের জেলাগুলোতেও নয়। পুরানো হোটেল-মোটেলগুলো আধুনিকায়নসহ সরকারিভাবে পর্যটন আকর্ষণগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অবকাঠামো আরো বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।