পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
বাড়ি, গাড়ি, এমনকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এবং ফ্রিজের মতো দৈনন্দিন জিনিসপত্রও আজকাল ভাড়ায় পাওয়া যায়। বিশ্বের কিছু অংশে প্রেমিক-প্রেমিকাও ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু জানা আছে কি, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত একটি আস্ত দেশ ভাড়ায় পাওয়া যেত?
কথা হচ্ছে লিচটেনস্টাইনকে নিয়ে। সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ার মাঝখানে অবস্থিত ইউরোপের ছোট্ট দেশটি ২০১১ সাল পর্যন্ত রাত্রিযাপনের জন্য ভাড়ায় পাওয়া যেত। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি সত্যি। কিন্তু পরে সেই নিয়ম বদলে যায়। তবে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজার জনসংখ্যার সেই দেশ মোটা টাকায় ভাড়া করতে পারতেন যে কেউ।
মাত্র এক রাতের জন্য পুরো লিচটেনস্টাইন ভাড়া করার খরচ ছিল বিপুল। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪ লক্ষ টাকা। এই অকল্পনীয় অভিজ্ঞতাকে সম্ভব করার জন্য লিচটেনস্টাইনকে জনপ্রিয় ‘হোমস্টে’ বুকিং সংস্থা এয়ারবিএনবিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। একটি বিপণন এবং প্রযোজনা সংস্থার সহযোগিতায় পুরো দেশটি ভাড়়া দেওয়া হত।
তবে লিচটেনস্টাইন ভাড়া করা সাধারণ ব্যাপার ছিল না। যখন কেউ দেশটি ভাড়া করতেন, তখন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিথির জন্য এলাহি আয়োজন করা হত। সারা দেশজুড়ে উৎসব শুরু হত। অতিথির রাস্তা চিনতে যাতে অসুবিধা না হয়, তাই রাস্তার ধারে বড় বড় পোস্টার লাগানো হত।
ঐতিহাসিক দুর্গসহ অতিথিদের সে দেশের এমন সব জায়গায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হত, যেখানে সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হত না। কেউ দেশটি ভাড়া করলে লিচটেনস্টাইনের রাজা ব্যক্তিগতভাবে তার হাতে দেশের চাবি হস্তান্তর করতেন।
রাজার তরফেও অতিথিদের জন্য থাকত বিশেষ ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আল্পস পর্বতের উপর আতশবাজির প্রদর্শনের আয়োজন করা হত। রাজা নিজেও অতিথি আপ্যায়নের জন্য ওই সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।
বিখ্যাত র্যাপ গায়ক স্নুপ ডগ একবার একটি মিউজ়িক ভিডিওর জন্য ক্ষুদ্র সেই দেশ ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেরি করে বুকিং করার জন্য তার আবেদন খারিজ করা হয়। অনন্য সুযোগটি স্বপ্নের মতো মনে হলেও দুর্ভাগ্যবশত ২০১১ সালের পর থেকে লিচটেনস্টাইন দেশটি ভাড়া দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
লিচটেনস্টাইন একটি আধা-সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যার নেতৃত্বে বর্তমানে রয়েছেন যুবরাজ দ্বিতীয় হান্স-অ্যাডাম। এটি ইউরোপের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ। মাত্র ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটির জনসংখ্যা ৪০ হাজারের থেকে সামান্য বেশি। লিচটেনস্টাইন এমন একটি দেশ, যার কোনও ঋণ নেই।
