লেখক: খবির উদ্দিন আহমেদ (চেয়ারম্যান, অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব)
বাংলাদেশ পর্যটন নীতিমালা ২০১০ স্পোর্টস ট্যুরিজমের উন্নয়ন এবং প্রচার-প্রচারণার কথা বলা হয়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল, হা-ডু-ডু এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খেলার পর গলফ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় খেলা হিসেবে আভির্ভুত হচ্ছে। এ দেশে গলফ-খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়ছে, যার মধ্যে ২-৩ জন খেলোয়াড় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
গলফ স্পোর্টসের নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরে স্থাপন করা হয়েছে অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। অপার প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর নিরিবিলি পরিবেশে প্রাকৃতিক ছায়ায় অরুনিমা রিসোর্টে রয়েছে এক অসাধারণ গলফ কোর্স। প্রায় ৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই গলফ কোর্সটিতে রয়েছে ৯-হোল এবং ন্যাচারাল ডাইভিং রেঞ্জ এবং ৩৬ পারের দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ, পাখ-পাখালি এবং সুবিশাল লেক। এখানে প্রতিবছর শীতে মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে লাখ লাখ পাখির আগমন ঘটে। এসকল পাখির কিচির-মিচিরে অরুনিমায় আগত গলফ প্লেয়ার এবং অতিথিরা বিমোহিত হয়ে যান। এখানে মূলত সারা বছরই দেশি-বিদেশি পাখির সমাগম ঘটে।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে, ইউএনডব্লিউটিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য আউট-ডোর এক্টিভিটির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং যার মধ্যে গলফ স্পোর্টস এই গুরুত্বের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। যখন একটি গলফ কোর্স প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়, সেই এলাকায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয় এবং তা দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যেই অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চারপাশে কমিউনিটি ট্যুরিজমের উন্নয়নসহ বেশ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। গলফকে বলা হয় পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব খেলা। গলফ কোর্স প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, কারণ তার নিজের জন্যই সবুজ প্রকৃতি এবং জলাশয়ের প্রয়োজন। অরুনিমা রিসোটের্র একটি চমৎকার উদাহরণ হয়েছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে গলফ-পর্যটনের হিডেন জেম হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে এবং এখানে মানুষের ক্রয় ক্রমতা ক্রমশ বাঁড়তে থাকায় এ দেশে গলফ ট্যুরিজমের প্রসারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যে গলফ খেলায় আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশ বিদেশি গলফ খেলোয়াড়দের ভালো গলফ সেবা দিতে পারে। গলফ ট্যুরিজমই পারে যুবসমাজকে ধর্মান্ধতা এবং ক্ষতিকারক নেশা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। বাংলাদেশের ক্রীড়া পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গলফকে অনেক পর্যটন বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বারোপ করেছেন। এখানে অনেক বিনিয়োগকারী আসছেন। গলফ পর্যটনে আরও বিনিয়োগ করা গেলে বাংলাদেশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। এসডিজি-৩ বলেছে, সব বয়সের সকল মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করুন এবং সুস্থ থাকার জন্য খেলাধুলার সাথে প্রাসঙ্গিক নীতিসমূহ প্রচার করুন। খেলাধুলার সাথে যুবকদের সম্পৃক্তকরণ জরুরি, কারণ তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য এটি অপরিহার্য। গলফ খেললে শরীরে ভিটামিন ডি পেতে সাহায্য করে; যা কোভিড এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করে। খেলাধুলাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম অর্জনে সহায়তা করে। তাই গলফের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আমাদের ক্রীড়া পর্যটনের প্রচার করা উচিত।
সারাবিশ্বে একটি বিশেষ পর্যটন সেগমেন্ট হিসাবে গলফিং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে। যদিও গলফ পর্যটন শিল্পের একটি বিশেষ অংশ, এটি বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর জন্য বিশ্বজুড়ে গত দশকে গলফে বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটিও উৎসাহজনক যে গলফ খেলার পর্যটন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশ বিশ্বমানের গলফ কোর্স এবং গলফ রিসোর্ট প্রতিষ্ঠা করছে। কেনিয়া, বতসোয়ানা, মেক্সিকো এবং অন্যান্য উত্তর-আমেরিকান এবং আফ্রিকান দেশগুলির মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিও গলফ রিসোর্ট, গলফ ক্লাব ইত্যাদির মাধ্যমে গলফ কোর্স সুবিধার অফার নিয়ে আসছে। যেখানে একটি গলফ রিসোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে শত শত কর্মসংস্থান সরাসরি তৈরি হয় যেমন- ক্যাডি, মার্শাল, ব্যাগার, প্রশিক্ষক, গলফ কোর্স রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী, খাদ্য ও পানীয় পরিষেবা কর্মী ইত্যাদি।
বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশন (বিজিএফ) দেশের গলফ কোর্সগুলোর একটি অ্যাপেক্স সংগঠন হিসেবে সারা বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে গলফ পর্যটনের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। বিজিএফ অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবকে সদস্য প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে অনেক আন্তর্জাতিক নামিদামি খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে। তাই এই সেক্টরে সরকারি বিনিয়োগসহ আন্তর্জাতিক গলফ টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।