বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৬-২৯ মে মুজিব’স বাংলাদেশ ট্যুরিজম প্রোমোশন অ্যান্ড বিটুবি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান ও নেপালের ৯৭টি ট্যুর অপারেটর অংশগ্রহণ করে। চারদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে দেশের পর্যটন সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণের প্রচার, ক্রস বর্ডার ট্যুরিজমের প্রসার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়।
মুজিব’স বাংলাদেশ ট্যুরিজম প্রোমোশন অ্যান্ড বিটুবি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে নেপাল থেকে ১২ জন, ভুটান থেকে ১৪, শ্রীলংকা থেকে ১৯ এবং ভারত থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের সীমন্তবর্তী ও নিকটতম ভারতের আটটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং অরুনাচল থেকে ৫২ জন ট্যুর অপারেটর অংশগ্রহণ করে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মুজিব’স বাংলাদেশ বিশেষ কান্ট্রি ব্রান্ডনেম প্রস্তাব করা হয়।
ব্রান্ডনেমটি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২০২১ সালে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে লোগো ডাকটিকিট উন্মোচন করা হয় যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটনবিষয়ক সব ধরনের সংশ্লিষ্ট প্রচার প্রচারণায় ব্যবহার করা হবে।
মুজিব’স বাংলাদেশ ট্যুরিজম প্রোমোশন অ্যান্ড বিটুবি এক্সচেঞ্জ প্রোগামটি মুলত দেশীয় পর্যটন শিল্পের অঞ্চলভিত্তিক প্রসার ও বাংলাদেশের ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিকটবর্তী অঞ্চলের স্টেকহোল্ডারদের কানেক্টিভিটি সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এই আয়োজনে চীনসহ অন্যান্য দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং এ ধারা অব্যাহত রাখবে।
এ আয়োজনের অংশ হিসাবে শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে শ্রীলংকান ট্যুরিস্টদের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বিশেষ অফার ঘোষণা করে।এ অফারের আওতায় কলম্বো ঢাকা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট, দুই রাত তিন বাংলাদেশের ঢাকা ও কক্সবাজার পরিদর্শন করা যাবে ২৪০ ডলারে। শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স মনে করে তাদের এ অফার বাংলাদেশে পর্যটক প্রবাহ বাড়াবে। শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের উদ্যোগে ১২ জন ট্যুর অপারেটর এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে; যারা নিজ খরচে ঢাকা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণ ভিজিট করবে এবং প্যাকেজভুক্ত করবে।
প্রথমদিন চারটি দেশের প্রতিনিধি নিজ দেশে থেকে বাংলাদেশে আসে। নিকটবর্তী অঞ্চলের হওয়ায় আকাশপথের পাশপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের স্থলবন্দর, আখাউড়া স্থলবন্দর এবং সিলেটের তামাবিল বর্ডার দিয়ে সড়কপথে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ভ্রমণ করে। অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে প্রথমদিন ঢাকা সিটি ট্যুর আয়োজন করা হয়।
সিটি ট্যুরে পুরান ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, লালবাগ কেল্লা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল। আকর্ষণীয় স্থানের পাশাপাশি শপিংয়ের জন্য বিভিন্ন বিপণীবিতানে নিয়ে যাওয়া হয়।
দ্বিতীয় দিন চারটি দেশ থেকে আগত ট্যুর অপারেটরদের সাথে বাংলাদেশের ১২৫ জন স্টেকহোল্ডারদের বিজনেজ টু বিজনেজ (বিটুবি) মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। বিটুবি মিটিং ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের গ্রান্ড বলরুমে সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ০৪ টা পর্যন্ত চলে। এর পূর্বে সকাল ৯টায় চারটি দেশ থেকে আগত ৯৭ জন প্রতিনিধির সামনে কান্ট্রি প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়।
বিটুবি মিটিংয়ে বাংলাদেশের পর্যটন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে হোটেল, রিসোর্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, এয়ারলাইন্স এবং ট্যুরিস্ট ভেসেল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১২৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডারদের সুষম অংশগ্রহণ নিশ্চিকল্পে ঢাকায় ব্যবসারত স্টেকহোল্ডারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডারদের এ আয়োজনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিদেশি স্টেকহোল্ডারদের সাথে নেটওয়ার্কিং পাশাপাশি দেশীয় স্টেকহোল্ডারদের নিজের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় হয়। একই সাথে অঞ্চলভিত্তিক নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠে।
বাংলাদেশি স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ৪৬ টি হোটেল ও রিসোর্ট, ৪টি দেশীয় এয়ারলাইন্স, ১০টি ট্যুরিস্ট ভেসেল এবং ৬৫টি ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এ আয়োজনে বাংলাদেশি স্টেকহোল্ডারগণ পর্যটন আকর্ষণের উপর বিভিন্ন প্যাকেজ, অফার, এয়ার টিকিট ও হোটেল সংক্রান্ত অফার বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের নিকট উপস্থাপন করে।
একই দিন অর্থাৎ ২৭ মে বাংলাদেশে আগত বিদেশি ট্যুর অপারেটদের জন্য আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার, শ্রীলংকার হাই কমিশনার, নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার লালন একাডেমির শিল্পীরা লালন সংগীত পরিবেশন করেন এবং থিয়েটার ড্যান্সেরও আয়োজন করা হয়।
২৮ মে ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানের ট্যুর অপারেটরদেরকে ডেস্টিনেশন ভিজিটের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান যেমন সমুদ্র সৈকত, ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ মন্দির, মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়িসহ অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ করেন। তারা কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডদের সাথে পরিচিত হন। অংশগ্রহণকারীরা ২৯ মে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফিরে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।