বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকরা ভ্রমণের জন্য বেছে নেন প্রতিবেশী ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা কিংবা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নির্ধারিত কিছু দেশ। এতদিন কেবল স্টুডেন্ট কিংবা বিজনেস ভিসায় জাপানে যেতেন বাংলাদেশিরা। পর্যটক হিসেবে যারা যেতেন, সেই সংখ্যাটাও ছিল খুবই নগণ্য।
তবে খুশির খবর হলো- বাংলাদেশি পর্যটক বাড়াতে নিয়েছে উদ্যোগ নিয়েছে জাপান। সে অনুযায়ী নেমেছে প্রচারণায়। শুধু তাই নয়, এজন্য চালাচ্ছে গবেষণাও। ভিসা প্রক্রিয়াও আরও সহজ করা হবে। জাপানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও, সংস্কৃতি, খাবারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ তুলে ধরতে ঢাকায় জাপান দূতাবাসের এমন উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশি মুসলমানদের কথা বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে হালাল খাবার, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নামাজের স্থানের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
এমন উদ্যোগে দুদেশের সম্পর্ক আরো গভীর হবে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের। গবেষণার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে মার্চের প্রথম সপ্তাহে হয়ে গেল পর্যটন মেলা। আগতদের কাছ থেকে নানা তথ্যও সংগ্রহ করছে জাপানি দূতাবাস। এর ফলে বাংলাদেশি পর্যটকদের এখন নতুন গন্তব্য হতে যাচ্ছে সূর্যোদয়ের এই দেশ।
জাপান গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এরপর দেশটির পর্যটন খাতে গতি ফিরেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি পর্যটক টানতে চায় জাপান। জানা গেছে, এই খাতটিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি খসড়া পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাপান সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২৩-২৫ অর্থবছরে পর্যটন খাতে মাথাপিছু ব্যয় বেড়ে উন্নীত হবে ১ হাজার ৫০০ ডলারে। ২০১৯ সালের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি। আগামী বছরগুলোয় এক্সপো ২০২৫-এর মতো বেশকিছু আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে জাপানে। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ ভ্রমণের অন্যতম প্রধান গন্তব্যে পরিণত হবে দেশটি।
জাপান ২০১৯ সালেও ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার পর্যটকের গন্তব্য ছিল। কিন্তু করোনার কারণে পরের বছরে বড় ধরনের অবনমন ঘটে। ২০২০ সালে পর্যটক নামে ৪১ লাখ ২০ হাজার ও ২০২১ সালে ঠেকে ২ লাখ ৫০ হাজারে। তবে শুধু সংখ্যার দিকে মনোযোগ না দিয়ে জাপান সরকার কৌশলগত পরিবর্তন আনতে চায় পর্যটন খাতে।
প্রধান শহরগুলোর বাইরেও দেশের অন্যান্য অংশে ভ্রমণের জন্য সম্ভাব্য উপায়ে পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ঘোষণা দিয়েছেন- পর্যটন খাতে ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করা হবে।
জাপানের ভিসার খুঁটিনাটি
জাপান সরকার জাপানে একটি সম্পূর্ণ নতুন ইলেকট্রনিক ভ্রমণ ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে; যাতে পর্যটকরা দেশটিতে যাওয়ার অনুমতির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। প্রতিমাসে প্রায় ত্রিশ লাখ বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে, জাপানি কর্মকর্তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করতে চাইছেন ।
যখন জাপানের জন্য ই-ভিসা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়, তখন থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশকে জাপানে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার জন্য এই ই-ভিসা প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্যই ভিসা থাকতে হবে নতুবা তাদের জাপানে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিটি ভ্রমণকারীর যে ধরনের জাপানি ই-ভিসার প্রয়োজন তা নির্ভর করবে প্রধানত তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং কতদিন তারা জাপানে থাকার পরিকল্পনা করছেন তার ওপর।
জাপানের ই-ভিসা প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য জাপানের অন্য যেকোনো ভিসা আবেদনের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ পাশাপাশি ন্যূনতম দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট। বাংলাদেশি ভ্রমণকারীর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট-স্টাইলের ছবির একটি ডিজিটাল কপি। জাতীয় পরিচয়পত্র । উদাহরণস্বরূপ, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা একটি জন্ম শংসাপত্র। বাংলাদেশের আবেদনকারী বিবাহিত হলে একটি বিবাহের শংসাপত্র। বাংলাদেশিদের প্রবেশের তারিখ, জাপানে আবাসন এবং পরবর্তী ভ্রমণের প্রমাণ সম্পর্কিত বিশদ বিবরণসহ একটি ভ্রমণপথ।
বাংলাদেশি নাগরিকরা জাপানে তাদের ভ্রমণের জন্য অর্থায়নের জন্য দুটি বিকল্প ব্যবহার করতে পারে। তহবিলের প্রমাণ দেখায় এমন একটি নথি সরবরাহ করা এবং স্পন্সর বা গ্যারান্টারের সাথে ভ্রমণ করা ।
আপনি যদি কোনো স্থানীয় স্পনসরের সহায়তায় জাপানে ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও নথি প্রদান করতে হবে। জাপানি পৃষ্ঠপোষক বা গ্যারান্টার এবং বাংলাদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীর মধ্যে সম্পর্কের বিস্তারিত নথি একটি চিঠিতে বিশদ বিবরণের প্রমাণ। যেমন যদি উপলব্ধ নথিপত্রগুলি প্রমাণ করে ব্যাংক স্টেটমেন্ট যা প্রমাণ করে যে জাপানের গ্যারান্টার প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য আর্থিকভাবে সক্ষম।
উপরোল্লিখিত হিসাবে, বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা যদি জাপানে তাদের নিজস্ব অর্থায়নের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে তাদের সাম্প্রতিক ট্যাক্স বা ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে তা করার ক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।
একবার এই সমস্ত তথ্য বাংলাদেশিদের দ্বারা একত্রিত এবং বিবেচনা করা হলে, তারা জাপানের অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করতে শুরু করতে পারে , যার মধ্যে মৌলিক ব্যক্তিগত প্রশ্ন রয়েছে, সেইসাথে পাসপোর্ট ডেটা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত অনুসন্ধানগুলি যা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় নিয়মিত এবং স্বাভাবিক।
জাপানের ভিসার প্রকারভেদ
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য জাপানের বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে । সাধারণভাবে, অনেক ধরনের ভিসা দুটি বিভাগের মধ্যে পড়ে: স্বল্পমেয়াদী ভিসা এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিসা।
ভ্রমণে জাপানের স্বল্পমেয়াদী ই-ভিসা
জাপানের জন্য স্বল্পমেয়াদী ট্যুরিস্ট ই-ভিসা ৯০ দিন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয় এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য উপযুক্ত, যারা জাপানে পর্যটন, অবকাশ কাটাতে, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বা ছোট ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য ভ্রমণ করছেন।
জাপানে এই ধরনের ইভিসা হয় একক-এন্ট্রি হিসাবে বা বহু-প্রবেশ ভ্রমণ পারমিট হিসাবে জারি করা যেতে পারে , এবং সেই সিদ্ধান্ত আবার নেওয়া হয় ট্রিপ বা ট্রিপের ধরনের ওপর ভিত্তি করে যা বাংলাদেশ থেকে প্রতিটি ব্যক্তি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ঠিকানা
জাপান দূতাবাস, ঢাকা
প্লট: ৫ ও ৭, দূতাবাস রোড
বারিধারা, ঢাকা।
ফোন: +৮৮০২২২২২৬০০১০ হটলাইন: +৮৮০১৮৭৮০৪৮৪২৫
ইমেইল: [email protected]