ভিতরগড় পঞ্চগড় জেলার সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল। এটি মধ্যযুগের একটি দুর্গ নগরী। ভিতরগড় দুর্গ পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত। এই দুর্গনগরীটি প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। পুরো দুর্গটি কয়েকটি স্তরে চারটি আবেষ্টনী দেওয়াল দিয়ে বিভক্ত ও এর উত্তর দিকের দেওয়াল এবং পূর্ব-পশ্চিম দেওয়ালের কিছু অংশ ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় পড়েছে।
১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে বুকানন হ্যামিল্টন ভিতরগড় পরিদর্শন শেষে লিখেছিলেন যে, “ভিতরগড় নগরীটি চারটি আভ্যন্তরীক গড়ের সমবায়ে গঠিত। গড়গুলির একটি অপরটির অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত। রাজার প্রাসাদ অবস্থিত ছিল সবচেয়ে ভিতরের গড়ে। সবচেয়ে ভিতরের এবং মধ্যবর্তী নগরীর উপবিভাগ ছিল। প্রতিটি নগরী সুইচ্চ দুর্গপ্রাচীর ও সুবৃহৎ পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল যার প্রস্থ প্রায় ৫০ ফুট এবং গভীরতা ১০ থেকে ১৫ ফুট। দুর্গর প্রাচীর মাটি ও ইটের মিশ্রণে তৈরী ছিল। দুর্গ নগরীটি কয়েকটি ক্ষুদ্র নগরীতে বিভক্ত ছিল। পূর্ববাহুর সবচেয়ে বাইরের নগরীতে নিম্নবর্গীয় মানুষজন বসবাস করতো এবং স্থানটির নাম ছিরৎল হরিরঘর।”
দ্য হিস্ট্ররী, এন্টিকুইট্যি, টপোগ্রাফি এণ্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া গ্রন্থের (৩য় খণ্ড) টাইটেল পাতা, ১৮৩৮ খ্রি.
প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন, দুর্গটি নির্মাণ করেছেন রাজা পৃথু ও এটিকে তিনি রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ১২৫৭ সালে সুলতান মুঘিসউদ্দীন কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করলে এটি সুলতানী শাসনে চলে আসে। ১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভিতরগড় অঞ্চলটি কামরূপ রাজ্যের হোসেন শাহ শাসন করেছেন। এছাড়াও এ অঞ্চলটি একসময় গৌড় ও প্রাগজ্যোতিষপুরের অংশ ছিল বলে মনে করা হয়। খনন কাজের সময় দুর্গটিতে দুটি প্রাচীন মন্দিরও আবিষ্কৃত হয়।