■ পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
বিশেষ করে গরমকালে কিংবা ঈদের ছুটিতে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সুইমিংপুলে ডুব দেওয়া মানে এক আলাদা স্বস্তি। কিন্তু আনন্দের এই জায়গা যদি নিয়ম না মেনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে হতে পারে বিপদের কারণ। হতে পারে দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্যঝুঁকি কিংবা সামাজিক অস্বস্তি। এই প্রতিবেদনে আমরা ভ্রমণে গিয়ে সুইমিংপুল ব্যবহার করার সময় অনুসরণযোগ্য সব নিয়ম-কানুন বিশ্লেষণ করব, যাতে আনন্দের মুহূর্ত দুর্ভাগ্যে পরিণত না হয় ।
সুইমিংপুল ব্যবহারের আগে যা জানা জরুরি
সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে দেশে ও বিদেশে পুল কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ম-রীতি থাকে। যেমন—জাপানে সুইমিংপুলে ঢোকার আগে গোসল বাধ্যতামূলক। তোয়ালে পানিতে ভেজানো নিষিদ্ধ। ফিনল্যান্ডে নীরবতা বজায় রাখা একটি সামাজিক নিয়ম। যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ পুলে ‘Shower before swim’ সাইন বাধ্যতামূলক এবং লাইফগার্ডের কথাই শেষ কথা। আবার কিছু নিয়ম লিখিত না থাকলেও সেগুলো পালন না করলে অস্বস্তি, বিপদ বা বিরক্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই সুইমিংপুলে ঢোকার আগে, সাঁতারের সময় এবং সাঁতারের পর কিছু ভদ্রতা ও নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
সাঁতার কাটার আগে
- শরীরে ঘাম, ধুলা ইত্যাদি থেকে পুলের পানি দূষিত হয়। তাই নামার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল আবশ্যক।
- পোশাক নির্বাচনে সচেতন থাকুন। সুইমিংকস্টিউম ছাড়া অন্য পোশাক, যেমন—জিন্স, টি-শার্ট বা ঢিলেঢালা জামা পানির মান ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।
- মেকআপ, পারফিউমের মতো কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী পুলের পানি দূষিত করতে পারে। এগুলো পরিহার করুন।
- হারানোর ঝুঁকি এড়াতে জুয়েলারি বা দামি ঘড়ি পরে না নামাই ভালো।
- রোগগ্রস্ত অবস্থায় পুল ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেমন— জ্বর, চর্মরোগ, চোখের সংক্রমণ, পেটের সমস্যা থাকলে পুলে নামা অনুচিত।
সাঁতারের সময়
- নিজের গতি অনুযায়ী ধীর, মাঝারি বা দ্রুত লেন বেছে নিন।
- লেনের ডান দিকে সাঁতার কাটুন, বাঁ দিক দিয়ে ফিরুন।
- বিশ্রাম নেওয়ার সময় দেয়ালের এক পাশে থাকুন, যাতে অন্যরা সহজে টার্ন নিতে পারে।
- কাউকে ওভারটেক করতে হলে তাঁর পায়ে হালকা ছোঁয়া দিয়ে ইশারা দিন।
- দেয়ালের এক কোণে দাঁড়ান, যাতে অন্যরা টার্ন নিতে পারে।
- চিত্কার বা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা এড়িয়ে চলুন। এটি অন্যদের মনোযোগবিচ্যুত করতে পারে।
- অকারণে পানি ছিটানো বা ঝাঁপানোর মতো বিরক্তিকর বিষয় থেকে বিরত থাকুন।
সাঁতারের পরে
- চেঞ্জিং রুমে পোশাক পরিবর্তন করুন, জনসমক্ষে পোশাক বদলানো অশোভন।
- সুইমিংপুলের পানিতে ক্লোরিন মেশানো থাকে। এটি শরীরের ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য সাঁতার শেষে আবার গোসল করুন।
- ক্লোরিন ধুয়ে ফেলুন এবং ত্বক ও চুলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- ব্যবহৃত সামগ্রী, যেমন—তোয়ালে, স্যান্ডেল, বোতল ইত্যাদি ছড়িয়ে না রেখে জায়গামতো রাখুন।
পুলে শিশুদের জন্য চাই বাড়তি মনোযোগ
- সাঁতার শেখানো হোক ছোটবেলা থেকেই। শিশুদের জন্য সাঁতার শুধু মজা নয়, একটি জীবনরক্ষা দক্ষতাও।
- শিশুরা পুলে থাকলে বড়দের সব সময় পাশে থাকা দরকার।
- ছোট শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট সাঁতার উপযোগী ডায়াপার ব্যবহার করুন।
- নিয়ম-কানুন এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাতে হবে।
যা একেবারেই করবেন না
- পুলে প্রস্রাব করবেন না বা থুতু ফেলবেন না।
- খাবার বা পানীয় পুলের পাশে গ্রহণ করবেন না।
- অন্যের সাঁতারে বাধা দেবেন না বা ঠেলে দেবেন না।
- লাইফগার্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করবেন না।
জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয়
- ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চিৎকার না করে দ্রুত লাইফগার্ডকে খবর দিন।
- অপ্রশিক্ষিত হয়ে পানিতে লাফ দেবেন না।
- চোট বা আঘাত পেলে প্রথমে আহত ব্যক্তিকে পুল থেকে উঠিয়ে দিন।
- প্রাথমিক চিকিৎসা দিন, প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠান।
সুইমিংপুল ভ্রমণকালীন আনন্দের অন্যতম একটি অংশ। তবে সামান্য অসতর্কতা বা নিয়ম লঙ্ঘন ভয়ংকর দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই পুল ব্যবহারে আমাদের সকলের উচিত স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সামাজিক সৌজন্য এবং পরিবেশবোধ বজায় রেখে নিয়মমাফিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। এই নিয়মগুলো শুধু শারীরিক নিরাপত্তার জন্য নয়, সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্মান রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে সম্মান করলেই একটি সাধারণ সুইমিংপুল অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়, নিরাপদ।