পর্যটন বিচিত্রা ডেস্ক
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তাই চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে ডাকা হয়। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাস। ঢাকার মত এই শহরটিও এরইমধ্যে ফ্লাইওভারে ঢেকে গেছে।
পাশাপাশি যানজটের দিক থেকে ঢাকার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও এর দর্শনীয় স্থানগুলো এখনো আকর্ষণ হারায়নি। চট্টগ্রাম শহরের মধ্যেই রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। কোনো কাজে চট্টগ্রাম গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই স্থানগুলোতে ঘুরে আসতে পারবেন।
পাহাড় ও সমুদ্র—দুই-ই আছে বলে অনেকেরই প্রিয় গন্তব্য চট্টগ্রাম। প্রকৃতি ও ঐতিহ্য দর্শনের পাশাপাশি রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকেরা তালিকায় রাখতে পারেন ফয়’স লেকের বেজক্যাম্প। কী আছে সেখানে?
বৃক্ষরাজিতে ঘেরা চারপাশ। তার মধ্যে পাহাড়ের বুকে শান্ত নীল জলের লেক। সেই লেকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে যেতে পারেন বুনো হরিণ কিংবা খরগোশের দেখা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন রোমাঞ্চকর সব রাইড। চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর ৩৩৬ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই বিনোদনকেন্দ্রের নাম ফয়’স লেক।
২০২৩ সালে ফয়’স লেকে চালু হয়েছে ‘বেজক্যাম্প’। কয়েকটি গাছকে কেন্দ্র করে দলগত কার্যক্রম ‘ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি’। রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্য পাঁচটি বাধা পেরোনোর ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি’। নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ‘টিম বিল্ডিং গেম’। আরও আছে লেকের জলে কায়াকিংয়ের সুযোগ। তির-ধনুকের তালিম নিতে আর্চারি। লেকের এক পাশের গাছ থেকে অন্য পাশে যেতে পারেন ‘ওয়াটার জিপ লাইন’ করে। দৈত্যাকার দোলনা ও হ্যামকে দোল খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রাম এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা গাড়িতে করে চলে যেতে পারেন ফয়’স লেকে। এখানে বেজক্যাম্পের কর্মকাণ্ডগুলো আলাদা আলাদাভাবেও করা যায়, তবে দিনব্যাপী কর্মকাণ্ড ও রাত্রিবাসের প্যাকেজ বেশি জনপ্রিয়।
লেকের পাড় ধরে বেজক্যাম্পের পথ। ঢুকতেই অভ্যর্থনাকক্ষ ও রেস্তোরাঁ। ভ্রমণের ক্লান্তি কাটাতে এখানে কিছুটা জিরিয়ে নিতে পারবেন। এরপর দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে পাহাড়ি রাস্তা। সোজা পথ ধরে গেলে ‘ক্যাম্পিং হিল’। আর ডান দিয়ে ওপরে উঠলেই ‘অ্যাকটিভিটি হিল’।
কয়েক ধরনের রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে এই পাহাড়। শুরুতেই আছে ‘জিপ লাইন’। তবে এই কর্মকাণ্ড সব শেষে করুন। সেখান থেকে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি ও অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি। এ দুই কসরতেই শারীরিক দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক দক্ষতার পরিচয়ও দিতে হবে।
রোমাঞ্চকর আরেকটি সংযোজন হলো দৈত্যাকার দোলনা। সাধারণ দোলনার চেয়ে এটি কয়েক গুণ লম্বা। মাটি থেকে টেনে অন্তত ১০ ফুট উঁচুতে তুলে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। দোল খেতে খেতে পাহাড়ের চূড়া থেকে উপভোগ করবেন চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য।
বেজক্যাম্পের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে রাতে। ঝিঁঝিপোকার ডাক আর শিয়ালের হাঁকে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সন্ধ্যার পরই লেকের পাড়ে জ্বলে ওঠে ক্যাম্প ফায়ার। দলে দলে সেখানে বসে গানের আসর।