- লেখা ও ছবি- মাহামুদুল হাসান #
প্রতিমাসংক্রান্ত সৌন্দর্য, বৈচিত্র আর প্রাণশক্তির একটি স্থান কেপ টাউন, কেপ টাউন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলির মধ্যে একটি, পর্বতমালা-মহাসাগর থেকে উপত্যাকা উপত্যাকার সব পর্বত, সৈকত,বণভূমি ও গমল ভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি নীল আকাশ এর শহরের মধ্যে একটি কেপা টাউন, যে শহর একদিনে আপনাকে চারটি ঋতু দেখাতে পারে।
জন ভ্যান রাইবেক, লোকটি ডাচ্, দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, তবে কেপ টাউন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তালিকা তৈরি করেন। যা রাইবেক কে চমৎকারভাবে বিখ্যাত করে তোলে। ভ্যান রাইবেক একজন এক্সপ্লোরার, ১৬৫২ সালে মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা আবিস্কৃত। কেপ টাউনের ভিত্তি ছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাচ্ বাসিন্দাদের একটি বাসস্থান শুরু করা, বলতে পারেন রাইবেক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
০১। ডাঃ ক্রিস্টিয়ান বার্নার্ড ১৯৬৭ সালে কেপ টাউনের গ্রেট স্কুয়ার হাসপাতালে, বিশ্বের প্রথম হৃদস্পন্দন সঞ্জালন করেছিলেন। প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সঞ্চালন ছড়াও তিনি ফুসফুসের ট্রান্সপ্লান্ট সম্বলিত করেন। প্রথম কিডনি দাতা ছিলেন একজন সাদা মেয়ে যিনি তার কিডনিকে একটি কালো মানুষকে দান করেছিলেন। ঘটনাটি সেই সময় অত্যন্ত বিতর্তিক হয়ে উঠেছিল।
০২। দক্ষিণ আফ্রিকা বৃহত্তম খনিজ পদার্থ প্রযোজক।
০৩। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোল কিম্বারলি বিগ হোল এবং জের্গাসফন্টিন খনি উভয়ই বিশাল, খোলা পিট হীরার খনি।
০৪। দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণি (উটপাখি), স্তন্যপায়ী (বেলহাজি), ক্ষুদ্রতম স্তন্যপায়ী (বাম হাতুড়ি), সর্বাধিক প্রজাতির লেদারব্যাক সমুদ্র কচ্ছপ, ওজন-১৫০০ পাউন্ড, দ্রæততম প্রাণী চিতা, সর্বোচ্চ প্রাণী, জিরাফ এবং সবচেয়ে বড় মাছ তিমি, হাঙ্গর।
০৫। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলপ্রপাত রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, তুগেলা জলপ্রাপাত এটি ভেনেজুয়েলার এঞ্জেল জলপ্রাপাতের তুলনায় ৯৪৮ মিটারের বেশি।
০৬। ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া গেছে কোয়েলাকানথ্ মাছ দেভোনিয়ান এর সময় থেকে মাছটি বিলুপ্ত।
০৭। ১৮৭৯ সালে বর্শা ও ঢালসহ ৩০ হাজার জঙ্গি যোদ্ধার কাছে বন্দুকধারী ১৪ হাজহার ব্রিটিশ সৈন্য পরাজিত হয়ে এবং প্রায় ১ হাজার ব্রিটিশ সৈন্য মারা গিয়েছিলো।
০৮। দক্ষিণ আফ্রিকাতে ১১টি সরকারি ভাষা রয়েছে। আফ্রিকান, ইংরেজি, নরডোবেলে, পেদি, সোথো, সোয়াজি, সাঙ্গাঁ সোয়ানিয়া, ভেন্ডা, জোসা এবং জুলু।
ঢাকা থেকে শ্রীলংকা, কাতার হয়ে লম্বা সময় পার করে পৌছলাম দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন এয়ারপোর্টে, গাড়ী নিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করছিল, বন্ধু মাসুদ ও মিন্টু , মাসুদ অনেক বছর ধরে কেপটাউন এ বসবাস করে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আগে থেকেই মাসুদ সমস্ত ভ্রমণ পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছে। এয়ারপোর্ট থেকে মাসুদ এর বাসায় যেতে চোখে পড়লো রাস্তার পাশে একটু দূর দূর সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো। কাটা তারে নিরাপত্তায় ঘেরা দেখেই বুঝতে পারলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় নিরাপত্তার বিষয় প্রথম প্রাধান্য দিতে হবে। ১৫/২০ মিনিটে পৌছে গেলাম মাসুদের বাসায়। কেপ টাউনে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশীদের বসবাস, আমরা গিয়েছিলাম এ বছর জানুয়ারি মাসে, ২ দিন পর বাংলাদেশীদের পিকনিক, মাসুদ আমাদের জন্য টিকিট করে রেখেছিল, সৌভাগ্যক্রমে যোগ দিতে পেরেছিলাম বাঙ্গালী মিলন মেলায়। প্রায় ৪ হাজার লোকের পিকনিক আয়োজন। কেপ টাউন খুব সুন্দর আর সাজানো শহর। মাসুদের বন্ধু সুজন এর গাড়ীতে পুরো শহর ঘুরে বেড়াতে খুব সহজ হয়েছে। গাড়ী ছাড়া কেপ টাউনে বেড় হওয়া কঠিন বিষয়। কেপ টাউনের বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলো হলঃ টেবিল মাউন্টেন , কনস্যান্টিয়া বে, ম্পোস বে, ভিক্টোরিয়া এবং আলফ্রেড (ভি এন্ড এ) ওয়াটার ফ্রন্ট, বোন্ডারস্ বিচ, ফিরস্টেন বস্চ ন্যাশনাল বোটানিকেল গার্ডেন, জেলা যাদুঘর, কেপ অব গুড হোপ এবং কেপ পয়েন্ট।
টেবিল মাউন্টেন কেপ টাউন শহরের একটি চির প্রতীক, সিগনাল হিল সহ টি টেবিল বে সম্মুখীন শহরের চারপাশে একটি অর্ধবৃত্তাকার গঠন করেছে। মাউন্টেন সমতল শীর্ষস্থানীয় পর্বত, যখন পাহাড়ের উপরে মেঘ ঢালু হয় তখন একটি টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেখা যায়। টেবিল উন্টের উপরে ক্যাবল কার দিয়ে মাত্র ৫ মিনিটে উঠা যায়। প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে শুরু আর ১০-১৫ মিনিট পর পর ক্যাবল কার ছেড়ে যায়। টেবিল মাউন্টে প্রায় ২,২০০ প্রজাপতির উদ্ভিদ এবং ১৪৭০ প্রজাতির ফুল রয়েছে।
ভিক্টোরিয়া এবং আলফ্রেড পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যা টেবিল বীচের আদ্রিয়ান ভ্যান ডের ডিয়ার নকশা তৈরি করেছেন। প্রাক্তন ওয়ার্কিং হ্রদ ৩০০ একর জমিতে, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এবং বিনোদনমুলক স্থান ভিক্টোরিয়া এন্ড আলফ্রেড এলাকাটি রাণী ভিক্টোরিয়া এবং তার দ্বিতীয় পুত্র প্রিন্স আলফ্রেড এর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
সাইমনস্ শহরে একাধিক আকর্ষণীয় স্থান রযেছে, বোল্ডারস সৈকত সহ তিনটি সুন্দর সৈকত আছে। নরম বালির সৈকতে সামুদ্রিক হাওয়ায় আপনাকে শীতল করে দিবে। এখানে সবচেয়ে রোমাঞ্জকর আকর্ষণ হলো ৩০০০(তিন হাজার) এরও বেশি আফ্রিকান পেঈনুনের বসবাস। এই পেঙ্গুইনরা সমুদ্র সৈকতে অবাধে ঘুরে বেড়ায় এবং এখানেই প্রজনন করে। বোল্ডারস্ বিচ টেবিল মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্ক সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকার অংশ তাই এখানেই প্রবেশ ফি প্রয়োজন। পেঙ্গুইন দেখতে দেখতে একটি হাঁটার পথ রয়েছে যা প্রজনন মাঠের মধ্য দিয়ে, আপনি কাছাকাছি ফক্সি বিচ এ পেঙ্গুইন দেখতে পারেন। পেঙ্গুইন দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জানুয়ারি মাস।
কেপ পয়েন্ট একটি রিজার্ভ এলাকা। একটি পেনিন সুলার পেছনে দু’টি শিখর রয়েছে- কেপ পয়েন্ট এবং কেপ অফ গুড হোপ। দর্শনার্থীদের গাড়ী পার্কের সুব্যবস্থা রয়েছে ১৮৫২ সালে নির্মিত হয়েছে কেপ পয়েন্ট লাইট হাউস, এখানে শীর্ষস্থানীয় জিনিসগুলির মধ্যে রয়েছে দুটি মাহাসগর রেস্তোরা, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি সহ রয়েছে ভাঙ্কো দ্যা গাম মনুমেন্ট এবং বার্তোলিমু ডায়াস স্মৃতিস্তম্ভ।
কেপ টাউনে মানব সৃজনশীলতা স্বতঃস্ফূর্ত। ২০১৪ সালে শহরটি বিশ্ব ডিজাইন শহর খেতাব লাভ করেছে এবং বর্তমান সময়েও ওয়াল্ডস ১০ বেস্ট সিটিস্ তালিকায় রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে সঙ্গে ভ্রমণ গাইড বই থাকা ভালো।