■ পর্যটন বিচিত্রা প্রতিবেদন
চট্টগ্রাম শহরের ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামবাসীর বিনোদনের অন্যতম প্রধান স্থান । একদিকে সমুদ্রের আছড়ে পড়া বিস্তীর্ণ জলরাশি, অন্যদিকে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্য। দুইয়ে মিলে যেন এক নৈসর্গিক পরিবেশ। স্থানীয়রাতো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের ভিড়ে নিয়মিত মুখরিত থাকে পতেঙ্গা।
পতেঙ্গায় রয়েছে নান্দনিক ফুল বাগান, পর্যটকদের জন্য সুসজ্জিত বসার স্থান, সাগরপাড়ের বিস্তৃত ওয়াকওয়ে। দিনের বেলায় যেমন দর্শনার্থীদের মনের মধুর দাগ কাটতে সক্ষম এই সৈকতে, তেমনই রয়েছে এর রাতের সৌন্দর্য । সমুদ্র পাড়ের মৃয়মান আলো আর শীতল বাতাস যে কারও প্রাণ জুড়াতে সক্ষম । চট্টগ্রাম শহরের ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এই সৈকতটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে । শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এর অনেক জেটি
এইখানে অবস্থিত।
বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকতের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকত বেশ জনপ্রিয়। তাই বছরের যেকোনো সময় জনসমাগম বা ভিড়ও খানিকটা বেশিই থাকে । চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সৈকতটি এই জেলার মানুষের কাছে ঘোরাঘুরির জন্য অন্যতম স্থান দখল করে আছে । শুধু কি চট্টগ্রামেরই মানুষ! সেই সঙ্গে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটক ঘুরতে আসছেন এখানে। কাছেই আবার শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় জেলার বাইরের পর্যটকেরা খুব সহজেই এক দিনের ট্যুরে সমুদ্রের পাড়ে বেরিয়ে যান । থাকে কমবেশি বিদেশিদের আনাগোনাও।
সৈকতে বাতির ব্যবস্থা করায় রাতের বেলা পর্যটকদের নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতটি রক্ষাণাবেক্ষণ করায় সৈকতের সৌন্দর্য এখন আগের থেকে অনেকটা সুন্দর হয়েছে । জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে সৈকতে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য আরো মনোরম । পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন ও পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করার কারনে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনসমাগম হতে দেখা যায়। তাই এখানে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ । সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য যেকোন মানুষের মনকে অনেক বেশি পুলকিত করে । সুতরাং সৈকতে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারেন। এখানে ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারবেন আপনি। সেই সাথে আছে স্পিডবোড কিংবা কাঠের তৈরি নৌকাতে করে বেড়ানোর সুযোগ। শাহ আমানত বিমান বন্দর, বিএনএস ঈশা খান (বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি) ও চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি খুব কাছাকাছি হওয়ায় আলাদা করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই । সৈকতেই আছে বার্মিজ মার্কেট । এই মার্কেট থেকে পছন্দের ছোটখাট কেনাকাটা সেরে নিতে পারবেন আপনি । সৈকতে বেড়াতে এসে যেকোন ধরণের বিপদ কিংবা অভিযোগ করতে পারবেন বন্দরে থাকা ভ্ৰাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে। স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়ায় চড়ার আগে অবশ্যই ভাড়া ঠিক করে নিবেন । কারণ এখানে প্রায় সবাই ঠকানোর চেষ্টা করে পর্যটকদের পতেঙ্গা সৈকতের বেশি উত্তর দিকে একা একা হাঁটতে না যাওয়াই ভালো।
কেনাকাটার জন্য যা থাকছে
ঘোরাঘুরির সময় আশপাশেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানা রকমের দোকানপাট । এগুলোকে একসাথে বার্মিজ মার্কেট বলা হয় । এখানে আপনি জামাকাপড়, জুতা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন রকমের প্রসাধনসামগ্রী পেয়ে যাবেন। তবে পর্যটকেরা মূলত এখান থেকে বার্মিজ আচার, চকলেট, কফি ও বার্মিজ প্রসাধনসামগ্রী বেশি কিনে থাকেন। এ ছাড়া কিছু কিছু নির্দিষ্ট দোকানে আপনি টুকটাক বার্মিজ ধাঁচের পোশাকও পেয়ে যাবেন।
উপভোগের জন্য যা থাকছে
পতেঙ্গা সৈকতে আসতেই সবার আগে যে জিনিসটি আপনার নজর কাড়বে তা হচ্ছে আকাশে উড়ন্ত রং- বেরঙের ঘুড়ি। মাছ, পুতুল, পাখি, প্রজাপতিসহ নানা রকমের বিশাল বিশাল ঘুড়ি আকাশে উড়তে দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন । এ ছাড়া থাকছে সাগরে ভাসমান ছোট বড় নানা রকম জাহাজ। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন রকম নৌকার সুব্যবস্থা। পর্যটকেরা এসবে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে পারেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আর সমুদ্রতীরে ঘোরার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ইজিবাইক। এ ছাড়া আপনি ছবি তোলার জন্যও এখানে অসংখ্য ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআরধারী ফটোগ্রাফার পাবেন । যারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনাকে ছবি প্রিন্ট করে দিয়ে দেবে। তবে অবশ্যই ছবি তোলার আগে ছবি প্রতির মূল্য জেনে নিয়ে এরপর তুলবেন।
সতর্কতা
পতেঙ্গা সৈকত আমাদের দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ । পর্যটন হিসেবেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি । তাই ভ্রমণের সময় আমরা ব্যক্তিগত যেকোনো বর্জ্য যেমন প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি ফেলার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করব।